Site icon অপরাজিতা

অপরাজিতা 2য় পর্ব

আমার বাড়িতে থাকতে গেলে এসব নষ্টামি চলবে না। আমি কিছু বুঝিনা তাই ভাবছো? বাপের রক্ত বইছে শরীরে। বাপের মতো নষ্ট হতে সযয় লাগবে না।

প্রিয়তার সহজ জবাব সুজলার পছন্দ হলো না। প্রিয়তার কোনো কিছুই তার পছন্দ হয় না। তার মতে তার সংসারের অশান্তির মূল কারণ প্রিয়তা। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন একদিন এই মেয়ের কারণেই তাদের পথে বসতে হবে। লোকে দুটাকা দিলে দুমুঠো খেতে পাবে নয়তো নেই। সুজলা চোখ বাঁকা করে তাকালো প্রিয়তার দিকে। মুখ ঝামটা মেরে বলল,

‘আমার বাড়িতে থাকতে গেলে এসব নষ্টামি চলবে না। আমি কিছু বুঝিনা তাই ভাবছো? বাপের রক্ত বইছে শরীরে। বাপের মতো নষ্ট হতে সযয় লাগবে না।’

‘সব কথার মাঝে আমার বাপকে না টানলেই কি নয় মামি?’

‘আহা! খুব গায়ে লাগছে দেখছি!’

প্রিয়তা আর জবাব দিলো না। সে জানে মামি এখন তাকে রাগাতে চখিছে এসব বলে। সে কোনো উত্তর দিলেই মামর কাছে বিচার বসাবে। এরপর এই সূত্র ধরে বিশাল ঝামেলা। কিন্তু সে কোনো ঝামেলা চায় না। রুমে ঢুকে ভেজা কাপড় বদলেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। সারাদিন পর নরম বিছানায় পিঠ লাগাতেই ঘুম এসে ধরা দিলো চোখে। সকল হতাশা চিন্তা ভুলে ঘুমের দেশে গা ভাসিয়ে দিলো সে। একটা লম্বা ঘুম দরকার।

মাঝরাতের দিকে প্রচন্ড ক্ষুদায় ঘুম ভেঙ্গে যায় প্রিয়তার। এপাশ ওপাশ করেও কোনো লাভ হয় না। রান্নাঘরে ঢুকে কোথাও কোনো খাবার খুঁজে পেল না। অবশিষ্ট কোনো খাবার রাখা নেই। শেষে এক কাপ চা আর দুটো বেকারি বিস্কুট খেয়ে শুয়ে পরতে হলো। আপাতত এটুকুতেই রাতটুকু চলবে।

পরপর দুদিন আয়াজের কোনোরকম খোঁজ পাওয়া গেল না। প্রিয়তা বেশ অবাক হলো। সাথে কিছুটা চিন্তিত ও। আয়াজকে সে যতটুকু চেনে‌ এভাবে হারিয়ে যাওয়ার পাত্র সে না। তাহলে? একটা সূক্ষ্ম চিন্তায় কপালের মাঝে ভাঁজ পড়লো। পরক্ষণেই চিন্তাগুলোকে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো। আয়াজ আসছে না এতে তো তার স্বস্থি পাওয়ার কথা চিন্তা নয়?

রিকশা‌ এসে বাস স্ট্যান্ড এ থামতেই প্রিয়তা ভাড়া মিটিয়ে নেমে গেলো। বাস এখনো আসেনি। প্রিয়তা ব্যস্ত নজরে আশপাশে তাকালো। কপালে পড়ে থাকা ছোট চুলগুলো কানের ভাঁজে গুজে দিয়ে সময় দেখলো। মাথা থেকে আয়াজ নামটা সরছে না। ছেলেটা আশপাশে থেকেও তাকে বিরক্ত করে না থেকেও সেম। প্রিয়তা ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। তার থেকে এত ছোট একটা ছেলেকে নিয়ে ভাবনা তাকে মানায় না। আয়াজ বাচ্চা ছেলে! পাগলামি করছে কিন্তু সে তো বুঝে! প্রিয়তার মন খারাপ হয়ে এলো। ছোট ছোট করে বলল,

‘তুমি কেন আমার আগে জন্ম নিলেনা? আমি একটা আপন মানুষ পেতাম। ভরসার একটা হাত পেতাম। কিন্তু আমি যে বড্ড অভাগী!’বাসের জানালা থেকে বাইরে তাকিয়ে ব্যস্ত শহর আর একের পর এক ফেলে যাওয়া বিশাল দালান দেখছিলো খুব মনোযোগ দিয়ে প্রিয়তা। এই জিনিসটা তার খুব ভালো লাগে। মনে হয় একেরপর এক বিল্ডিং পেছনের দিকে ছুটছে। তখনি পাশ থেকে কাতর স্বরের আওয়াজ এলো,

‘আপনি আমার খোঁজ নিলেন না কেন প্রিয়? আমি ভিষণ অসুস্থ। একবার ছুঁয়ে দেখুন।’

কথাটা বলে নিজের কপাল এগিয়ে আনলো আয়াজ। প্রিয়তা হকচকালো। চকিত দৃষ্টিতে আয়াজের পানে চাইল। আয়াজ কখন বাসে উঠে তার পাশের সিট দখল করে বসেছে তা তার খেয়ালে নেই। আয়াজের মুখটা ভিষণ শুকনো লাগছে। চোখ গুলো লাল হয়ে আছে। চুলগুলো অযত্নে এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। সুন্দর ওষ্ঠজোড়া নিলচে বর্ণ ধারণ করেছে। প্রিয়তা ব্যস্ত হাতে আয়াজের কপাল ছুঁয়ে দিলো। শরীরের তাপ অনেক বেশি। প্রিয়তা প্রশ্ন ছুঁড়ল,

‘অসুস্থতা নিয়ে এখানে কি করছ? বাসায় ফিরে যাও।’

‘আপনাকে দেখতে এসেছি।’

আয়াজের উত্তরে প্রিয়তা মুখ গম্ভীর করে নিল। শাসনের স্বরে বলল,

‘তোমার পাগলামি মাত্রা অতিক্রম করছে আয়াজ।’

এ প্রসঙ্গ আয়াজের ভালো লাগলো না। সে নিভু গলায় বলল,

‘এভাবে বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। আপনার কাঁধে একটু মাথা রাখি?’

প্রিয়তা সাথে সাথে উত্তর দিলো,

‘একদম না।’

প্রিয়তার কথা শেষ হওয়ার আগেই আয়াজ তার মাথা এলিয়ে দিল প্রিয়তার কাঁধে। প্রিয়তা মানা করলো না আর। থম মেরে বসে রইল। আয়াজ মুচকি হাসলো। একরাশ ভালোলাগা নিয়ে চোখ বন্ধ করলো। শুধাল,

‘আপনার চোখে কি আমার সুদর্শন রূপ স্কান করতে পারে না? আপনি কখনো মুগ্ধতা নিয়ে আমায় দেখেন না কেন প্রিয়? অফিসের প্রত্যেকটা মেয়ে আমার দিকে কেমন করে তাকায়। এই দেখুন সামনের সিটে বসা মেয়ে দুটোও বারবার মাথা ঘুরিয়ে আমায় দেখছে। আপনার খারাপ লাগছে না?’

আয়াজের কথা অনুসারণ করে সামনে তাকাতে দেখল সত্যিই দুটো মেয়ে বারবার আয়াজের দিকে তাকাচ্ছে। মুচকি মুচকি হাসছে। প্রিয়তার গায়ে যেন আগুন ধরে উঠলো। সে দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল,

‘এই মুহূর্তে তুমি বাস থেকে নেমে যাবে। নয়তো আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।’

আয়াজ মাথা উঁচু করে প্রিয়তার দিকে চাইল। প্রিয়তার লাল হয়ে যাওয়া নাকের ডগায় আঙ্গুল ছুঁয়ে বলল,

‘কিন্তু আমি আরো কিছু সময় আপনার সাথে থাকতে চাই।’

প্রিয়তা রেগে যেয়ে কিছু বলতে নিতেই ঠোঁটে আঙুল ছুঁয়ে তার কথা বন্ধ করে দিল আয়াজ। মুচকি হেসে বলল,

‘আপনি ভিষণ হিংসুটে প্রিয়। তারা আমায় আপনার থেকে নিতে পারবে না। কেবল দূর থেকে দেখতে পাবে। এতটুকুও আপনি মেনে নিচ্ছেন না। ভেরি ব্যাড!’

অকপটে বলা এমন সত্যকথা হজম করা কঠিন হলো প্রিয়তার কাছে। যতনে লুকিয়ে রাখা সত্য এভাবে প্রকাশ পাক তা সে কখনোই চায়নি। মুখ জানালার দিকে ঘুরিয়ে চুপ করে বসে রইল সে। আয়াজ হাসলো। নিঃশব্দ সেই হাসিতে শরীর দুলে উঠলো। প্রিয়তার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

‘আপনি কি লজ্জা পাচ্ছেন? আপনাকে ভীষণ আদুরে লাগছে। একটু ছুঁয়ে দেই?’

আয়াজের লাগামহীন কথায় শীরায় শীরায় রক্ত জমে গেল যেন। জোর গলায় বাস থামাতে বলতেই বাস থেমে গেলো। কোনো কথা ছাড়াই বাস থেকে নেমে গেল প্রিয়তা। আয়াজ বাঁধা দিল না। সিটে মাথা এলিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখল। শরীরের তাপ বাড়ছে। সে কি মরে যাচ্ছে? আগামী কালের গরম সংবাদ হবে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে শহীদ হয়েছেন একুশ বছর বয়সের এক তাগড়া জুবক। কথাটা ভাবতেই হাসি পেলো। এমনটা হলে খারাপ হয়না। সে মারা গেলে প্রিয়তা ভিষণ দুঃখ পাবে সে জানে। তার জন্য প্রিয়তাকে কাঁদতে দেখতে তার ভীষণ ভালো লাগবে। এসব ভাবতে ভাবতে বাসের সিটেই ঘুমিয়ে পড়লো আয়াজ।

সূর্যের আলোতে উজ্জল এক ঝকঝকে সকাল। বেশ বেলা করে ঘুম ভাঙলো প্রিয়তার। মামা বাড়িতে থাকলে তাকে রান্নাঘরে খুব একটা যেতে হয়না। কাজের মেয়ে আর মামি দুজন মিলেই সামলে নেয় সবটা। ঘড়িতে বেলা দশটা বেজে পাঁচ মিনিট। আজ শুক্রবার তার ছুটির দিন। প্রিয়তা সময় নিয়ে বেড থেকে উঠল। বালিশের তলা থেকে ফোন বের করতেই দেখলো বাইশটা মিসডকল। ফোন সাইলেন্ট থাকায় সে টের পায়নি। প্রিয়তা ফোন হাতে অপেক্ষা করলো। ওপারের ব্যক্তি আবারো তাকে কল করবে। মিনিটের মাথায় পরিবেশ কাঁপিয়ো ফোন ভাইভ্রেট হলো। প্রিয়তা অলস ভঙ্গিতে ফোন কানে ধরলো।

‘মরার মতো ঘুমাও তুমি প্রিয়তা? আমি শিওর মৃত ব্যক্তিও এতবার কল করলে বিরক্ত হয়ে জেগে উঠবে কল রিসিভ করতে।’

‘এটাই মৃত আর জীবিত ব্যক্তির মধ্যে তফাৎ।’

‘আচ্ছা সে কথা থাকলো। বিগত দশ মিনিট জাবত আমি তোমাকে টুয়েন্টি প্লাস কল দিয়েছি। আমার জীবন থেকে অমথা টেন মিনিট মাইনাস হলো যার ঋণ পরিশোধ হওয়ার নয়। আজ আমাদের ক্যাম্পাসে দেখা করার কথা মনে আছে তো? ভুলে গেলেও প্রবলেম নেই আমি মাত্রই মনে করিয়ে দিয়েছি। আর হ্যাঁ মনে করে প্লিজ আমার ফোনো সাতটাকা পঁচিশ পয়সা লোড করে দিও। এই টাকাটা তোমার জন্য অযথা নষ্ট হলো। আমি অপচয় একদম পছন্দ করিনা ইউ নো! টাটা।’

টুট টুট করে ফোন কেটে গেল। এতকিছুর মাঝে প্রিয়তা একটা কথা বলার সুযোগ মাত্র পেল না। এই মাত্র যে ফোনে কথা বলল এটা টিয়া। টিয়ার মতোই প্রচুর কথা বলে মেয়েটা। ভিষণ পড়ুয়া স্বভাবের মেয়ে হলেও রিটেক না দিয়ে কোনো সেমিস্টার পাশ করা তার পক্ষে সম্ভব হয়নি। এবং কৃপনতায় সেরা। ক্যান্টিনের মামার কাছে দু টাকা বাকি ছিল। তিনদিন ঘুরে দু টাকা আদায় করেছিল। তা নিয়ে বন্ধুমহলে হাসাহাসি হলে সে মুখ গোমড়া করে বলেছিল,

‘এই দু টাকার সাথে আর দুটাকা যোগ করলে একটা সমুচা হয়ে যাবে। তাহলে অযথা টাকাটা অন্যকে কেন দেব? মামাকে দু টাকা দিলেকি সে বাকি দুটাকা মাফ করে একটা সমুচা দিবে?’

প্রিয়তা ফোন রেখে সময় নিয়ে তৈরি হলো। আকাশি রঙের কুর্তির সাদে সাদা প্যান্ট সাদা ওড়না। পুরো একটা আকাশ যেন নিজের শরীরে জড়িয়ে নিয়েছে সে। রুম থেকে বের হতেই সুজলা মুখ বাঁকিয়ে বললো,

‘এত রঙঢঙ করে কোথায় যাওয়া হচ্ছে? আজ যে ছুটির দিন দুটো কাজ করলেও তো হয়। তা নয় মহারাণী গায়ে হাওয়া লাগাতে বের হচ্ছেন। আমার হয়েছে যত জালা।’

রত্না সবজি কাটতে কাটতে বলল,

‘কি কইলেন খালা? আপাই তো সব কাজকাম করে। খালু আসলেই সে একটু ছুটি পায়। আপনে হুদাই আপাকে দূষমন সাজান কেন?’

সুজলা গরম চোখে তাকাল। ধমক দিয়ে বলল,

‘ছোট মুখে বড় কথা বলবি না। নিজের কাজ কর। আসছে সাফাই গাইতে।’

প্রিয়তা মুচকি হেসে ব্যাগ কাঁধে বেরিয়ে এলো। আজকের পরিবেশ ভিষণ সুন্দর। একদম তার মনের মতো। কিছুটা এগিয়ে যেতেই দেখলো মোরে চায়ের দোকানে বসে দু ঠোঁটের ভাঁজে সিগারেট গুঁজে আয়েশ করে ফুক দিচ্ছে আয়াজ। সুন্দর মুডটা মুহূর্তেই বিরাস হয়ে গেলো। চোখ কুঁচকে তাকালো আয়াজের পানে। আয়াজের সিগারেট খাওয়ার স্টাইলটা ভালো লাগলো প্রিয়তার। মানুষ বুঝি সিগারেটেও এত সুন্দর করে টান দিতে পারে?

আয়াজের নজর প্রিয়তার দিকে পরতেই সে দ্রুত হাতে সিগারেট ফেলে দিয়ে দাঁড়াল। প্রিয়তার দিকে এগিয়ে আসতেই প্রিয়তা প্রশ্ন ছুঁড়ল,

‘তুমি নেশা কর?’

‘যাস্ট মাঝেসাঝে সিগারেট। এটাকে নেশা বলে না।’

প্রিয়তা নাক কুচু করলো। আয়াজের দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে থমথমে গলায় বলল,

‘দু হাত দূরে সরে দাঁড়াও। ভিষণ বাজে গন্ধ। এসব ছাইপাশ খেয়ে আমার ত্রিসিমানায় আসার চেষ্টা করবে না।’

আয়াজ সরল না। বরং আরো একপা এগিয়ে দাঁড়াল।প্রিয়তার দিকে কিছুটা ঝুঁকে ফিসফিসিয়ে বলল,

‘আপনি একবার আমার হয়ে যান। এসব ছাইপাশ ছেড়ে দিব ফর সিওর। কেবল এবং কেবল আপনাতে মত্ত হব।’

প্রিয়তা বড় চোখ করে তাকাল। কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। নিজেকে শান্ত রেখে শক্ত কন্ঠ বলল,

‘তুমি দিনদিন বেশরম হচ্ছ আয়াজ।’বহুদিন বাদে সকল ফ্রেন্ড একত্রিত হয়ে আনন্দ উল্লাশে মেতে উঠেছে। গ্রাজুয়েশন শেষে প্রায় সবাই এখন কর্মজীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। কেউবা সংসার সামলাচ্ছে। এত ব্যস্ততার মাঝে বন্ধুদের খোঁজ রাখা মুশকিল প্রায়। জমজমাট আড্ডা শেষে বাসায় ফেরার পালা এলো। প্রিয়তা ফুটপাত ধরে একা হাঁটতে লাগলো।

‘আইসক্রিম খাবেন?’

প্রিয়তার এই কন্ঠের মালিককে চিনতে কষ্ট হল না। সে পাশ না ফিরেই বলল,

‘এখানে কি করছ আয়াজ? তোমাকে না আমার থেকে দূরে থাকতে বলেছি?’

আয়াজ ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। নির্লিপ্ত ভাবে বলল,

‘আপনি যতবার দূরে যেতে বলবেন আমি তত স্টেপ আপনার কাছে এগিয়ে আসব। চাইলে ট্রাই করে দেখতে পারেন।’

প্রিয়তা কিছু বলল না। সে জানে আয়াজ যেটা বলেছে সেটাই করবে। হঠাৎ আয়াজ বলে উঠলো,

‘এখানেই দাঁড়ান। আমি আসছি। কোথাও জাবেন না প্লিজ।’

প্রিয়তা শুনলো। চুপচাপ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। আজ তার মন ভিষণ রকম ভালো। সে ভেবেছে আজ আয়াজের ছোট আবদারগুলো সে পূরণ করবে। কেমন হয় আয়াজকে চমকে দিলে?

মিনিট খানেক বাদে দুটো আইসক্রিম হাতে আয়াজ এগিয়ে এলো। একটা প্রিয়তার দিকে এগিয়ে দিতেই প্রিয়তা মিষ্টি করে হাসলো। আয়াজের হাত থমকে গেল। মুগ্ধ হয়ে সে প্রিয়তার পানে চাইল। কাঁপা কন্ঠে বলল,

‘আপনি হাসবেন না প্রিয়। আমি তাহলে নিয়ম ভঙ্গ করে কোনো অন্যায় করে ফেলব।’

প্রিয়তা দু পা দূরে সরে দাঁড়ালো। কথার প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল,

‘ফ্রি আছ তুমি?’

আয়াজ যেন আবার চমকাল। আজ প্রিয়তা একের পর এক চমক দিয়ে চলছে। আয়াজ মিষ্টি করে হাসলো। সুন্দর করে উত্তর দিলো,

‘আপনি বললে আমি সর্বদা ফ্রি।’

প্রিয়তা মাথা নাড়াল। কিছু না বলে সামনের দিকে পা বাড়ালো। আয়াজ প্রিয়তার না বলা কথা বুঝে নিল যেন। মুচকি হেসে সেও প্রিয়তার পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো। হাঁটতে হাঁটতে সে সুর ধরলো,

‘তোর এক কথায়

আমি রাখব হাজার বাজি।

তোর ইশারায়,

আমি মরে যেতেও রাজি।’

বাসায় ফেরার পুরো রাস্তাটা হেঁটেই এলো তারা। আয়াজ প্রিয়তাকে তার বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিলো। পুরো রাস্তায় তাদের কোনো কথা হয়নি কিন্তু তবুও এই সময়টুকু আয়াজের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় ছিল।

ছোটবেলা থেকে অযত্নে বড় হওয়া প্রিয়তা বড্ড ভালোবাসার কাঙাল। একটুখানি ভালোবাসা পেতে সে নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও রাজি। সেখানে আয়াজের এই নিখুঁত ভালোবাসাকে সে কিভাবে পায়ে ঠেলে দিবে? কিন্তু তার যে ভয় হয়। ভিষণ ভয়। এই সমাজ আর সমাজের মানুষের ভয়। তারা যে এ সম্পর্ককে স্বাভাবিক ভাবে নিবে না। আর আয়াজের পরিবার? তারা কি কখনো প্রিয়তাকে মেনে নিবে?

রাত আনুমানিক দুটোর কাছাকাছি। তীব্র ঝাঁকুনিতে ঘুম আলগা হয়ে এলো প্রিয়তার। চোখ টেনে মেলে পরিস্থিতি বুঝতে কয়েক সেকেন্ড সময় নিল। বালিশের নিচে মোবাইল ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। বিরক্ত ভঙ্গিতে ফোন কানে ধরলো। কোনোরূপ কথা ছাড়াই গম্ভীর কণ্ঠে শুধাল,

‘রাত বিরাতে কল করা ভিষণ রকম অযৌক্তিক কাজ। অন্যের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানো এক রকম অভদ্রতা। আ…’

আর কিছু বলতে নিবে তার পূর্বেই গম্ভীর পুরুষালি গলায় আয়াজ বলে উঠলো,

‘আপনাকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। এই মুহূর্তে ছাদে আসবেন। টাইম অনলি ফাইভ মিনিট। কুইক।’

কল কেটে গেল। ঘুমের ঘোরে প্রিয়তা কিছু বুঝলো না। কপাল কুঁচকে আবারো তলিয়ে গভীর ঘুমে। তার জীবনে এখন একমাত্র লক্ষ ঘুম। পাঁচ মিনিট অতিক্রম হতেই মোবাইল বেজে উঠল। প্রিয়তা নড়েচড়ে উঠলো। এবার তার ঘুম কিছুটা হালকা হয়েছে। কল রিসিভ করতেই আয়াজের গম্ভীর কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।

‘ছাদে আসুন। নয়তো আমি আপনার রুমে চলে আসব ফর সিওর।’

প্রিয়তার ঘুম উড়ে গেলো। হতভম্ব হয়ে উঠে বসলো। এ কোন রূপ প্রকাশ করতে শুরু করেছে ছেলেটা? প্রিয়তা চাপা কন্ঠে বলল,

‘তুমি পাগল আয়াজ। এখন কি ছাদে আসার সময়?’

আয়াজ সুন্দর নম্র ভাবে জবাব দিলো,

‘অপেক্ষা করছি।’

ফোন কেটে গেল। প্রিয়তা থম মেরে বসে রইল কিছুক্ষণ। ছেলেটাকে আস্কারা দিয়ে ভিষণ রকম ভুল করেছে সে। মোবাইল স্ক্রিনে সময় দেখে গখয়ে ওড়না জড়িয়ে চুপিসারে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠে এলো। কাঁপা পায়ে ছাদে উঠতেই একজোড়া হাত তাকে টেনে পাশে নিয়ে এলো। প্রিয়তা আতকে উঠল। চাঁদের আলোতে আয়াজের মুখ স্পষ্ট হতে প্রিয়তা স্বস্তি পেল।

‘এত রাতে এসবের মানে কি আয়াজ?’

‘মিস করছিলাম।’

প্রিয়তা থামলো। গভীর দৃষ্টিতে তাকালো আয়াজের পানে। চাঁদের আলোতে আয়াজের মুখটা ভিষণ কোমল পবিত্র লাগছে। প্রিয়তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। আয়াজের চোখের পখপড়ি গুলো বড় বড়। আচ্ছা ছেলেদছর চোখের পাপড়ি এত সুন্দর হয়? আগেতো সে লক্ষ করেনি। আয়াজ চুপ করে প্রিয়তার কর্মকাণ্ড দেখতে লাগলো। মিটিমিটি হেসে সে আরো একটু ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়ালো। প্রিয়তা চমকে উঠলো। পিছিয়ে যেতে যেয়ে বাঁধা পেল। আয়াজ শক্ত বাঁধনে আটকে ফেলেছে তাকে। প্রচন্ড গতিতে ছুটতে থাকা হৃৎপিণ্ড যেন কয়েক সেকেন্ডের জন্য থমকে গেল। পা দুটোও বেঈমানি করলো যেন। বিন্দু মাত্র স্থান থেকে নড়লো না। প্রীয়তা অনুভব করলো সে কাঁপছে। প্রচন্ড গতিতে কাঁপুনি দিচ্ছে তার হাত পা। আয়াজ গভীর চোখে প্রিয়তার চোখে চাইল। আচানক তপ্ত ঠোঁট ছোঁয়াল প্রিয়তার কপালে। প্রিয়তা স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। কয়েক সেকেন্ড পর আয়াজ সরে এলো। কোনো কথা ছাড়া ছাদের রেলিং টপকে নেমে গেলো নিচে। প্রিয়তা চোখ কপালে নিয়ে তাকালো। দ্রুত পায়ে রেলিংয়ের কাছে আগাতেই দেখলো দুই বিল্ডিংয়ের মাঝে ভারসাম্য রেখে খুব সহজেই নেমে গেছে আয়াজ। প্রিয়তা স্বস্তি পেল। একটুর জন্য তার প্রাণ উড়ে গিয়েছিল।

বাকি রাতটুকু প্রিয়তার নিদ্রাহিনতায় কাটলো। লজ্জা রাগ ভয়ের সংমিশ্রণে তৈরি অন্যরকম অনুভূতি অনুভব হচ্ছে তার। একটা অনিশ্চিত সম্পর্কের দিকে পা বাড়াচ্ছে সে। আদেও কি এর কোনো ভবিষ্যৎ আছে? চোখ ভিজে উঠেছে তার। হারাতে হারাতে সব হারিয়ে ফেলেছে সে। আর কিছু সে হারাতে চায় না।

প্রিয়তা দুদিন ধরে ঘরের বাইরে যাচ্ছে না। স্কুল থেকে অসুস্থতার কথা বলে ছুটি নিয়েছে। হেডমাস্টার ভদ্রলোক ও প্রিয়তার মিথ্যা অসুস্থতার নাটককে সত্য ভেবে ব্যাথিত হয়ে ছুটি মঞ্জুর করেছেন। স্নেহের কন্ঠে শুধালেন,

‘একটু ফল খাও। ঔষুধে অনিয়ম করো না। তোমার এখন ইয়াং এইজ। খাওয়া দাওয়া নিয়মিত করা দরকার। আমি সুযগ পেলে তোমায় এসে দেখে যাব। তুমি আমার মেয়ের মতো। আমি চাই তুমি দ্রুত সুস্থ হয়ে ফের। আর ছুটির ব্যাপারে একদম চিন্তা করতে হবে না। তুমি নিশ্চিন্তে রেস্ট নাও।’

প্রিয়তা মিথ্যায় পটু না হলেও সে খুব সুন্দর ভাবে তার অসুস্থতা রিপ্রেজেন্ট করেছে। নিজের এমন নিখুঁত অভিনয়ে নিজেই হতবাক হলো। কিন্তু ভদ্রলোকের জন্য খারাপ লাগলো। সে কতটা না স্নেহ নিয়ে প্রিয়তাকে আস্বস্ত করলো! কিন্তু সে তো জানেই না তার মেয়ের মতো মেয়েটা তাকে কি দারুণ মিথ্যার জালে ফাঁসিয়েছে।

ড্রয়ার থেকে ফোন বের করে অন করতেই একের পর এক টেক্সট, ভয়েস ম্যাসেজ আসতে লাগলো। এই দুদিন প্রিয়তা সকল প্রকার যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে রেখেছিল। প্রয়োজন ব্যতিত রুমের দরজাও মিনিটের জন্য খোলা রাখেনি সে। একপ্রকার বন্দি বানিয়ে নিয়েছে নিজেকে। এমনটা নয় সে ভিষণ মানসিক চাপে আছে। নিজেকে টাইম দেওয়ার নামে গন্ডারের মত পরে পরে ঘুমিয়েছে। দুদিনের টানা ব্রেকে তার মন মেজাজ বেশ ফুরফুরে। সকাল থেকে সুজলা নানা কথা বলে যাচ্ছে। মিনিটের জন্য তার মুখ বন্ধ হচ্ছে না। কিন্তু প্রিয়তার তাতে মাথা ব্যাথা নেই। সে নিজের মতো করে খেয়ে দেয়ে রুমে চলে এসেছে। তাতে সুজলা আরো ক্ষিপ্ত হলো। হুংকার ছেড়ে বলল,

‘শরীরে তেল বেশি হইছে? আমার কথাকে দাম দিচ্ছিস না যে?’

‘কে বলেছে দাম দেই দেই না মামি? মাস শেষে সাত হাজার করে টাকা দেই। এটা কি যথেষ্ট না?’

কথাটা বলে প্রিয়তা রুমে চলে গেল। এদিকে সুজলা চিৎকার করেই চলছে। রত্না মুখ টিপে হাসছে। আজ একদম তার মন মত জবাব দিছে প্রিয়তা। এক মগ গরম কফি হাতে ছেলের রুমে ঢুকলেন শাকিলা। আয়াজ তখন ল্যাপটপের স্ক্রিণে তাকিয়ে ভিষণ মনোযোগ দিয়ে অফিসের কিছু ফাইল দেখছে। কফির মগটা পাশে রেখে ছেলের পাশে বসলেন তিনি। পরম স্নেহে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,

‘বেশি চাপ পড়ে যাচ্ছে বাবা? ক্লান্ত লাগছে তোমাকে। এত প্রেশার এখনি কেন নিতে গেলে?’

আয়াজ শুকনো করে হাসলো। ল্যাপটপ কোল থেকে নামিয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে বাচ্চাদের মতো করে গুটি মেরে শুয়ে পড়লো। ক্লান্ত কন্ঠে বলল,

‘এই সামান্য কাজ আমাকে দুর্বল করার ক্ষমতা রাখে না মা। তোমার বৌমার নিরব আঘাত আমাকে ভেঙে দিচ্ছে। তোমার উচিত বৌমাকে শাসন করা। তোমার একমাত্র ছেলেকে সে এভাবে কষ্ট দিচ্ছে এর শাস্তি কি হওয়া উচিত?’

শাকিলা বিস্ময় নিয়ে ছেলের দিকে চাইলেন। কোন বৌমার কথা বলছে আয়াজ? সে তো কোনো বৌমাকে চেনে না। ছেলেকি তাদের না জানিয়ে বিয়ে করে নিল? শাকিলা গম্ভীর কণ্ঠে জানতে চাইল,

‘তুমিকি আমাদের না জানিয়ে বিয়ে করেছ?’

‘উহু।’

‘তাহলে বৌমা কে?’

‘যাকে আমি বিয়ে করবো।’

‘তুমিকি মেয়ে ঠিক করে ফেলেছ?’

‘চার বছর পূর্বে।’

‘তোমাদের সম্পর্ক এতদিনের আর আমাকে জানালে না!’

‘তার পর্যন্ত পৌঁছাতে আমাকে এখনো এক সাগর পরিমাণ পথ পারি দিতে হবে মা। খুব পাষাণ হৃদয়ের মানবী সে মা। এই দেখ আমি কতটা পুড়ছি তার জন্য কিন্তু আজ দুদিন ধরে সে তার সাথে যোগাযোগের সব মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে।’

বাচ্চাদের মতো করেই একের পর এক অভিযোগ করে চলল আয়াজ। শাকিলা চুপ করে ছেলের অভিযোগ শুনলো। আয়াজ ছোট থেকেই গম্ভীর। খোলামেলা ভাবে কথা বলেনা সে কখনো। নিজের মাঝে সবটা লুকিয়ে রাখতেই সে পছন্দ করে। আজ তার ছেলেটা কতটা কষ্ট পেয়ে তার সাথে সব শেয়ার করছে ভেবেই তির চোখ ছলছল করে উঠলো। মেয়েটাকে সামনে পেলে সে অবশ্যই এর জবাব চাইবে। শাকিলা স্বযত্নে ছেলের মাথায় হাত ছোঁয়াল।

প্রিয়তা আজ নীল রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। হাতে নীল রেশমি চুড়ি। খোঁপায় ফুটন্ট গন্ধরাজ ফুল। চোখ ভরা কাজল। আর লালে রাঙানো ঠোঁট। বাতাসের তালে তালে কানের ঝুমকো জোড়া দুলছে। কপালের দুপাশে নেমে আসা সরু চুলগুচ্ছ বারবার বাতাসে নিজের স্থান থেকে নড়ে যাচ্ছে। প্রিয়তা বিরক্ত হলেও খুব যত্ন নিয়ে তা গুছিয়ে নিচ্ছে। বাসস্টপে দাঁড়িয়ে বিরষমুখে আশপাশে নজর বুলাল প্রিয়তা। তার এত যত্ন করে সাজা কি ব্যর্থ হলো? প্রিয়তার সুন্দর মুখটা মুহূর্তেই মলিন হয়ে এলো। রাগ হলো ভিষণ। এ মুহূর্তে নিজের গালে কষিয়ে দুটো থাপ্পর লাগাতে পারলে কিছুটা হলেও শান্তি লাগত। নিজের থেকে ছোট কোনো ছেলের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে এরকম সেজেগুজে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা মোটেই তাকে সোভা পায় না। কিন্তু সে ষোল বছরের এক কিশোরীর মতো প্রেমিকের জন্য অপেক্ষা করছে। বারবার ব্যস্ত চোখে প্রেমিককে খুঁজছে। এগুলো নেহাত বোকামি ছাড়া অন্য কিছু নয়।

আয়াজ এলো ঠিক দু ঘন্টা পর। এলোমেলো চুল, চোখের নিচে কালচে ছাপ আর অগোছালো পোশাকে আয়াজকে দেখে প্রিয়তার বুকের ভিতর হাহাকার করে উঠলো। এতক্ষণ জমিয়ে রাখা রাগটা যেন নিমিষেই উদাও হয়ে গেলো। আয়াজের দিকে এগিয়ে আসতেই আয়াজ ব্যথাতুর কন্ঠে শুধাল,

‘আমায় কষ্টের মাঝে রেখে আপনার এ সাজ কার জন্য প্রিয়? সে কি আমার থেকেও বেশি ভালোবাসে আপনাকে?’

আয়াজের চোখ ছলছল করে উঠলো। এই কঠিন ছেলেটার চোখে পানি দেখে প্রিয়তা চমকাল। পরমুহূর্তে ভিষণ ভালোলাগা কাজ করলো। এই অতিব সুদর্শন পুরুষটা যে কেবল তার উইল সে হাতে পেয়ে গিয়েছে। প্রিয়তা মুচকি হেসে জবাব দিলো,

‘এক বাচ্চা প্রেমিকের অপেক্ষায় ছিলাম। অলরেডি তিনি আমাকে দু ঘন্টা অপেক্ষা করিয়েছে। আর এখন নিজেই কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে।’

প্রিয়তা একটু থেমে আবারও বললো,

‘এসব বাচ্চা সামলানো ভিষণ কষ্টের বুঝলে? কখন না কেঁদে দেয়! মানুষ কি ভাববে বলোতো?’

আয়াজ হেসে ফেলল প্রিয়তার কথা বলার ভঙ্গি দেখে। সাথে প্রিয়তাও হাসলো। আয়াজ হাসলে ডান গালে গভীর খাদের সৃষ্টি হয়। যা এই প্রথম প্রিয়তার নজরে এলো। সে মুগ্ধ হয়ে তার ছোট্ট প্রেমিকে দেখলো। নিঃসন্দেহে ছেলেটা ভিষণ সুন্দর। আগে কেন নজরে এলো না?

‘আপনার পাশে আমায় বড্ড বেমানান লাগছে প্রিয়।’

ফুটপাত ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল আয়াজ। প্রিয়তা বিরোধিতা করলো। বলল,

‘তোমায় উদাস প্রেমিকের মতো লাগছে আয়াজ। সুন্দরী প্রেমিকার পাশে উদাস প্রেমিকের কম্বিনেশন সবথেকে সুন্দর। বেমানান লাগার কোনো প্রশ্নই আসে না। আমি যতবার শাড়ি পড়ব তুমি এমন অগোছালো ভাবেই আমার পাশে হাঁটবে।’

আয়াজ মাথা নাড়িয়ে হাসলো। সূর্যের সরু আলো প্রিয়তার মুখে পড়ছে। চমৎকার লাগছে দেখতে। আয়াজ হাত দিয়ে আড়াল করলো সূক্ষ সে রশ্মিকে। অভিযোগ করে বলল,

‘আমি ছাড়া আপনাকে কেউ ছুলে আমার ভিষণ হিঃসা হয় প্রিয়। সূর্যের ও জানা উচিত আপনি কেবল আমার। আপনাকে ছোঁয়ার সাহস দেখানো তার মোটেই উচিত নয়।’

প্রিয়তা খিলখিল করে হেসে উঠলো। আয়াজ মুগ্ধ হয়ে তা দেখলো। প্রেয়সীর এ রূপ তার প্রথম দেখা। প্রিয়তাকে এভাবে প্রাণখুলে হাসতে আগে কখনো সে দেখেনি। ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো মন।

প্রিয়তা বাড়ি ফিরল সন্ধ্যা করে। পুরোটা দিন সে আজ বাড়ির বাহিরে কাটিয়েছে। ড্রয়িংরুমে বসে জাহিদ প্রিয়তার ফেরার অপেক্ষা করছিল। প্রিয়তা ড্রয়িংরুমে মামাকে দেখেও না দেখার মতো করে রুমে চলে যাচ্ছিল কিন্তু বাঁধা দিল জাহিদ। গম্ভীর কণ্ঠে ঢাকে বলল,

‘এখানে এসে বসো। কথা আছে।’

প্রিয়তা দ্বিরুক্তি করলো না। চুপচাপ মামার দেখানো সোফায় বসলো। জাহিদ প্রিয়তার দিকে একবার তাকিয়ে বলল,

‘কোথাও গিয়েছিলে?’

‘হুম।’

Exit mobile version