Site icon অপরাজিতা

শরীর টরীর দেখিয়ে ফাঁসালি নাকি

pexels-photo-18083293.jpeg

এভাবে পেট বের করে কাকে দেখাচ্ছো?এ ঘরে তো আমি ছাড়া আর কেউ নেই??ওওও ওয়েট ওয়েট তার মানে তুমি আমাকেই…!!এতোয় যদি দেখানোর ইচ্ছে থাকে তাহলে এভাবে আর্ধেক দেখানোর কি দরকার পুরোটাই না হয় দেখা…..

সরবকে কথা বলতে না দিয়ে নূহী শাড়ির আচলটা ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে মুখ বাকিয়ে উওর দেয়-আমার বয়েই গেছে আপনাকে দেখাতে…..!!আর আপনার কোনো কাজ নেই সারা দিন শুধু আমার খুত ধরে বেরান….-বাবাহ্ একেই তো নিজে থেকে আমাকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করছো তার উপর বললেই দোষ!!নূহী আর সরবের সাথে কথা বরায় না সে নিজেও জানে সরবের সাথে মুখ লাগিয়ে সে পারবে না।তাই মুখ বাকিয়ে গুটি গুটি পায়ে হাটা ধরে উল্টো পথে।অতীতের হাতরিয়ে বেশ কিছু সুন্দর মুহূর্ত চোখের সামনে ভেসে উঠে নূহীর।কি ভালোই না ছিলো সেই দিনগুলো।আনমোনে নিজে নিজেই হেসে দেয় নূহী।হটাৎই পেছন থেকে কেউ একজন এসে নূহীকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠাটিয়ে একটা চড় মারে।ঘটনাটা হুট করে ঘটাই নূহী টাল সমলাতে না পেরে নিচে পরতে নিলে সরব আবার নূহীর হাত ধরে নেয়।নূহীকে টেনে আবার দাড় করিয়ে দেয়।।নূহী অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সরবের দিকে….সরব যেন চোখ দিয়েই তাকে ভস্ম করে দিচ্ছে।-আমাকে মার…ররলেন কেন?-কোই মারলাম আমি তো তোমাকে আদর করলাম তুমি অনেক মহান কাজ করছো তাই এই আদর।-কি করছি আমি??- ঐ যে বললাম মহান কাজ করছো….!! বেঈমান কোথাকার তোমার জন্য কি করি নাই আমি বাসার সবার বিরুদ্ধে গিয়ে তোমাকে বিয়ে করলাম তোমাকে আশ্রই দিলাম আর তুমি মায়ের হাত ধরে চলে আসলা আমাকে একবার বলার প্রয়োজন বোধ করলা না!!এতোটা অকৃতজ্ঞ তুমি?অবশ্য কাকে কি বলছি তোমার অকৃতজ্ঞতার নমুনা আমি তো আগেও পেয়েছি!!-আসলে…..-আসলেই তুমি একটা বেঈমান। তোমার কাছে ভালোবাসা অনুভূতী কোনো কিছুরই দাম নাই।।-ভালোবাসা??কিসের ভালোবাসা কে কাকে ভালোবাসে সরব ভাই।আপনি আর নিসু আপু দুজন দুজনকে ভালোবাসেন।আপনাদের গায়ে হলুদের দিন আমার সাথে আপনার বিয়ে হয়।আমাদের বিয়েটা ভালোবাসাবসির বিয়ে ছিলো না।আমরা শুধু পরিস্থিতির স্বীকার মাত্র।কথাগুলো বলেই নূহী মুখ ঘুরিয়ে নেয়।সরব কি বলবে বুঝতে পারছে না।-নুসরাত আপু অনেক গুলো ঘুমের ঔষুধ খেয়ে নিয়েছিলো।-(….)-আপু আপনাকে ভালোবাসে।আমি আপনাদের মধ্যে থাকতে চাই না।তালাকনামা তৈরী করে রাখবেন আমি সই করে দিবো।।।এখন আপনি আপুর কাছে যান আপু সেই থেকেই কেঁদেই…..সরব আর কথা বারাই না গটগট করে সিড়ি বেয়ে নেমে যায়।এদিকে নূহীর মা এসে চিল্লা পাল্লা শুরু করে দেয়।সরব এ বাড়িতে এলো অথচ কারো সাথে দেখা না করেই চলে গেলো।এমন কি নুসরাত যে তার জন্যই মরতে গিয়েছিলো তাও কি সে জানে না।তাহলে কেন সে নুসরাতের কাছে গেলো না!!রাগে যেন তিনি ফেটে পরছেন।আর তার সব রাগ গিয়ে পরছে নূহীর উপর।নূহীকে তিনি সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছেন”সরবের সাথে যদি সে সংসার করার স্বপ্ন দেখে তাহলে তার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না”এদিকে সরবের মাও নূহীকে বিদায় করতে পেরে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলেন।একেই তো বাচ্চা মেয়ে পেটে তেমন বিদ্যা নেই তার উপর একবার বিয়ে হয়ে ছাড়া ছাড়ি হয়েছে যাকে বলে ডিভোর্সি।এমন মেয়েকে সরবের জন্য কি করে মানবেন তিনি।অসম্ভব!!!সুযোগ বুঝে যতো তাড়া তাড়ি সম্ভব সরবের সাথে নুসরাতের বিয়েটা দিয়ে দিতে হবে না হলে ছেলে যে কখন বেঁকে বসে কে জানে!!!এই মেয়েকে নিয়ে কম পাগলামি তো করে নি সরব……-নূহী আমি সরবকে খুব ভালোবাসি-জানি!!-নিজের থেকেও বেশি!-জানি-এতোই যখন জানিস তখন কি করে পারলি নিজের বোনে ভালোবাসার মানুষকে বোনের কাছ থেকে কেড়ে নিতে।-কোই কাড়লাম??আমি তো কাড়ি নি!নুসরাত রাগে গজ গজ করতে করতে নূহীর দিকে এগিয়ে আসে।নূহীর হাতটা ধরে এক ঝটকা মেরে নিচে ফেলে দেয়।নুসরাতে এখন ইচ্ছে করছে নূহীকে মেরে তক্তা বানিয়ে দিতে।নয়তো মেরে ফিট লাগিয়ে দিতে কিন্তু পারছে না!!কেন পারছে না তা নুসরাত নিজেও জানে না।হয়তো বোনের প্রতি ভালোবাসা নয়তো অন্য কিছুনুসরাত নিজেকে শান্ত করে নূহীকে টেনে তোলে দাড় করিয়ে দেয়।-নূহী সরবকে ডিভোর্স দিয়ে দে!!ছেড়ে দে ওকেপ্লিজ আমাকে একটু শান্তি দে।।নূহী নুসরাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে জবাব দেয়-বা রে আমি কখন সরব ভাইকে ধরে রাখলাম??সরব ভাই কি ছোট বাচ্চা যে ধরে রাখবো??-নূহী তুই বুঝতে পারছিস না আমি কি বলছি সরবকে ডিভোর্স দিয়ে দে প্লিজ!!-ডিভোর্স!!কিসের ডিভোর্স আমাদের বিয়ে হয়েছে একটা অজ পাড়া গায়ের ছোট্ট একটা কাজি অফিসে।আমাদের তো রেজিস্ট্রিও হয় নি তাহলে ডিভোর্সের কোনো প্রশ্নই আসে না আর তাও যদি তোমরা চাও তাহলে তালাকনামা নিয়ে এসো আমি সই করে দিবো!এইটুকু বলেই নূহী গট গটিয়ে ঘরে চলে যায়।নুসরাত সেখানেই ঠায় দাড়িয়ে আছে।বুকের ভেতর কোথাও একটা আশার আলো জেগে উঠে।নুসরাত ছুট লাগায় মায়ের ঘরে মাকে জানাতে হবে”সরব আর নূহীর বেয়ে আইনত হয় নি তাহলে বিয়েটা ভাঙ্গতে বেশি অসুবিধে হবে না”আজ সন্ধ্যে থেকেই আকাশটা কেমন থম মেরে আছে।নূহীর মনটাও থমথমে হয়ে আছে।সরবকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।নূহী সরবকে করে দেওয়ার পর থেকেই সরব নিখোজ।না সে বাড়ি ফিরেছে না কারো সাথে যোগাযোগ করছে।সরবের মা ও বার কয়েক এবাড়িতে ফোন করে নূহীকে গাল মন্দ করেই চলেছে।যতোই রাত বাড়ছে আকাশটা আলো বেশি ঘন কালো মেঘে ঢেকে যাচ্ছে।একেই তো শীত কাল তার উপর গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি।শীতের পরিমাণ যেন কয়েক গুন বাড়িয়ে দিয়েছে।নূহী বিছানায় বসে গায়ে কম্বলটা টেনে নিয়ে ফোনে গান চালিয়ে হাতে একটা ম্যাগাজিন নিয়ে বসতেই ফোনটা বেজে উঠে। নূহী ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা আননোন নাম্বার।নূহী সেদিকে গ্রাহ্য না করেই আবার ম্যাগাজিনে চোখ ডোনায়।ফোনটা বেজেই চলেছে।নূহী কি মনে করে ফোনটা তুলে একটা লম্বা সালাম দেয়।সালামের জবাবে একটা মৃদু হাসির শব্দ।গলাটা বেশ চেনা লাগছে নূহীর কাছে-কেমন আছো নূহী???(কোনো রকম সম্মোধন ছাড়া)-কে বলছেন??-বা রে তোমার সরব ভাইয়ের সাথে দুদিন থাকতে না থাকতেই আমাকে ভুলে গেলে!!-কে???-চিন্তে পারছো না নাকি চিন্তে চাইছো না???-রাখছি আমি!!-আমার ফোন রেখে দিবা তোমার এতো সাহস!!-(…)-ভালোই আছো তাই তো??তোমাকে খুব সুখ দিয়েছে তোমার সরব ভাই তাই না??তা এমন কি সুখ দিলো যা আপি পারি নাই….-সেটা আপনি সারা জীবন চেষ্টা করলেও পারবেন না।ইনফ্যাক্ট আপনার কাছ থেকে আমি কিছু চাইও নি যে আপনি দিবেন-নূহী তুমি…..-(টুট টুট টুট)নূহী ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মেরে উঠে দাড়ায়।ঘরের মধ্যেই বার দুইয়েক পায়চারী করে।খুব রাগ হচ্ছে।সাথে কষ্টও হচ্ছে আবার কখনো কখনো নিজেকে অসহায় বলে মনে হচ্ছে।কেমন একটা মেশালো অনুভূতি।অসহ্য এই অনূভুতি টা।ঘরের মধ্যে কেমন দম বন্ধ দম বন্ধ লাগছিলো।কেমন ভয় ভয় ও করছিলো।বার বার সরবের কথা মনে হচ্ছে।বেশ চিন্তাও হচ্ছে।সরব ঠিক আছে তো।চিন্তায় মাথাটা ভার হয়ে আসছে তাই নূহী বারান্দার দরজাটা খুলে বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়।এদিক ওদিক পায়চারি করে।হটাৎ ই আবার ফোনটা বেজে ওঠে।এবার নূহী সেদিকে ফিরেও তাকায় না।হয়তো সেই অচেনা নাম্বার।না নূহী ফোনটা ধরবে না।কিছুতেই না।অতীতে ফিরে যেতে চায় না সে।না ফিরতে চায় অতীতের সেই ভয়ংকর মূহুর্তগুলোতে।কিন্তু ফোনটা নূহীর বিরক্তি না বুঝতে পেরে বেজেই চলেছে…..নূহীর কেন যেন আগ্রহ জাগে।ছুটে গিয়ে ফোনটা হাতে নিতেই দেখে কলটা কোনো আননোন নাম্বার থেকে নয় সরবের নাম্বার থেকে এসেছিলো।নাম্বারটা সেভ না করা থাকলেও নূহীর নাম্বারটা চিন্তে একটুও কষ্ট হয়নি।নূহী ফোনটা বেড সাইডে টেবিলের উপর রেখে আবার বারান্দায় আসতেই চোখ যায় বাড়ির সামনে দাড়িয়ে থাকা কালো রঙ্গের একটা গাড়ির দিকে।গাড়িতে মাথা নিচু করে উবু হয়ে কেউ একজন বসে আছে।নূহীর আর বুঝতে বাকি নেই কে সে।নূহী গুটি গুটি পায়ে বাড়ির সদর দরজা খুলে নিঃশব্দে পা বাড়ায় বাড়ির বাহিরে।এখন তার গন্তব্য সেই কালো রঙ্গের গাড়িটা,গাড়িতে বসে থাকা লোকটা!!সরব বার বার আলতো হাতে নূহীকে ছুঁয়ে দিচ্ছে আর নূহীও বার বার সরবের হাত সড়িয়ে দিচ্ছে।কিন্তু আজ যেন সরবের হাত বাঁধাই মানছে না নির্দ্বিধায় ছুয়ে দিচ্ছে প্রিয়সীর শরীর।বারান্দায় হাটা হাটি করার সময় নূহীর চোখ যায় বাহিরে দাড়িয়ে থাকা কালো গাড়িটার দিকে গাড়িটা চিন্তে বাকি নেই নূহীর।এটা সরবের গাড়ি।নূহী একটু ভালো করে উকি ঝুকি দিতেই দেখে গাড়ির ভেতর সরব মাথা নিচু করে আছে।কেমন একটা নিতিয়ে পড়েছে।নূহীর ভেতরটা কেমন করে উঠে।নূহী সদর দরজা খুলে গুুটি গুটু পায়ে এগিয়ে যায় সরবের দিকে।সরবের কাছে গিয়ে গাড়ির দরজা খুলতেই সরব মিটিমিটি চোখে তাকায় নূহীর দিকে।-এখানে কি চাই??সরব কথা বলার সাথে সাথে নূহীর নাকে একটা কটু গন্ধ এসে ধাক্কা লাগে।নূহী তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে।-কি ছাইপাঁশ খেয়েছেন।ইয়াক কি বিশ্রী গন্ধসরব দাঁত বের করে হেসে উঠে।নূহী নাক চেপে সরবকে আকড়ে ধরে।সরবকে গাড়ি থেকে বার করে কোনো রকমে টেনে হিচঁড়ে ঘরে নিয়ে আসে।সরবও টলমল পায়ে নূহীকে অনুসরন করে।নূহী সরবকে বিছানায় শুয়ে দিতেই সরব নূহীর হাত ধরে একটা হেচকা টান দেয়।নূহী হুমরি খেয়ে সরবের বুকে গিয়ে পড়ে।-সরব ভাই এসব ছাইপাঁশ গিলে খবর দার আমার কাছে আসবেন না আমার গা গুলাই-বা রে না খেলে মনে হয় তুমি আমাকে কতো তোমার কাছে আসতে দাও-আমাদের মধ্যে কি আদও কাছাকাছি আসার মতো সম্পর্ক আছে???সরব নূহীর দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে আছে।ঠিক নূহীর দিকে নয় নূহীর হালকা গোলাপী ঠোটের দিকে।নূহী কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই সরব নূহীর ঠোঁট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নেয়।নূহী কিছুক্ষন ছটফট করে কেমন শান্ত হয়ে যায়।বেশ কিছুক্ষন পরে সরব নূহীকে নিজে থেকেই ছেড়ে দেয়।ছাড়া পেয়ে নূহী ছুট লাগায় বাহিরে।উদ্দেশ্যে সরবের জন্য টক কিছু একটা বানিয়ে আনতে হবে যাতে নেশাটা কাটে।নূহী এক গ্লাস তেতুলের পানি এনে ধীর পায়ে সরবের কাছে আসে।বুকের ভেতর কেমন ঢিপ ঢিপ করছে।কেমন যেন লাগছে সরব যদি আবার তেমন কিছু করে কি করবে সে,সরবকে সায় দিবে নাকি দূরে সড়িয়ে দিবে এসব ভাবতে ভাবতে নূহী সরবের কাছে যেতেই দেখে সরব ঘুমিয়ে পরেছে।বিছানার একদম কর্নার ঘেষে গুটি শুটি মেরে বাচ্চাদের মতো করে শুয়ে আছে সে।নূহী সরবের কাছে গিয়ে কম্বলটা গায়ে টেনে দেয়।তারপর সরবের মাথার কাছে গিয়ে বসে পড়ে।নূহীর কেন যেন খুব ইচ্ছে করছে সরবের চুলগুলো ছুয়ে দিতে, মাথায় হাত বিলিয়ে দিতে।নূহী এতো শত না ভেবে সরবের মাথায় হাত বুলাতে থাকে।নূহী নিজের মধ্যে কেমন একটা টান অনুভব করে সরবের প্রতি।সরবকে দেখতে দেখতে নূহী কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে তা সে খেয়ালই করে নি।সকাল বেলা মায়ের চেচামেচি তে নূহীর ঘুম ভাঙ্গে।-অসভ্য নির্লজ্জ মেয়ে কোথাকার এতো বার বারন করা সত্যেও তুই সরবকে বাসায় ডেকে সারা রাত এক বিছানায় কাটালি?কি ভেবেছিসটা কি এভাবে প্যাচ কষে সরবকে নিজের কাছে বেঁধে রাখবি??তোর সাহস তো কম নয়!!একটা কথা ভালো করে শুনে রাখ সরবের সাথেই নুসরাতের বিয়ে হবে তুই যতই প্যাচ কষ এই বিয়ে হবেই। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে…..আর এমনিতেও সরব নিজে এই বিয়েতে মত দিয়েছে তুই চাইলেও আর সরবকে আটকাতে পারবি নাএইটুকু বলেই তিনি থেমে যান।মুখ বাঁকিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসেন।নূহী মায়ের কোনো কথায় ঠিক মতো বুঝতে পারছে না।আর ঠিক কি কারনে মা তাকে এতোগুলো কথা শুনালো তা ও সে বুঝে উঠতে পারছে না।হটাৎই নূহীর কাল রাতের কথা মনে পড়ে যায়।তারপর নিজেকে সে বিছানায় আবিষ্কার করে।নূহীর যতো টুকু মনে পড়ে সে তো বসে ছিলো তাহলে তাকে সুয়ে দিলো কে?না কি সে নিজে নিজেই শুয়ে পড়েছে।কিন্তু এতো পড়িপাটি ভাবে!!এতো শত চিন্তার মাঝে নুসরাতের আগমন ঘটে।মেয়েটার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।সেই সাথে ফুলেও গেছে।বোধয় সারা রাত না ঘুমিয়ে কেঁদে কেটে পাড় করেছে।নুসরাত ঘরে আসতেই নূহী বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়ায়-উহু উঠছিস কেন শুয়ে থাক।মনে চাইলে আরেকটু ঘুমোতেও পাড়িস-মানে?-সারা রাত বোধয় তোর মানে তোদের ঘুম হয় নি এখন একটু ঘুমিয়ে নে!নূহী অবাক চোখে নুসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।-বুঝলি না তাই তো!!-হু-নূহী সারা রাত একই ঘরে একই বিছানায় দুজন ছেলে আর মেয়ে একই কম্বলের নিজে দুজন দুজনকে লেপ্টে শুয়ে থাকে তার মানেটা নিশ্চয় আমাকে বলে দিতে হবে না!-নুসা আপু তুমি ভূল…-থাক আর বলতে হবে না।জানিস নূহী আমি কাল সারা রাত ঘুমোতে পারি নি।-আপু তুমি যা ভাবছো ভূল ভাবছো-নূহী সরব তোকে এতো ভালোবাসে কেন??আমাকে বাসলে কি হয়??আমি কি এতই খারাপ???কথাগুলো বলেই নুসরাত বেরিয়ে যায়।নূহী এবার একটু শান্ত হয়ে বসে।সবাই ঠিক কি বলার বা বোঝানোর চেষ্টা করছে নূহী ঠিক বুঝতে পারছে না।এমনিতেও সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার পর বেশ কিছুক্ষন মাথা হ্যাং হয়ে থাকে।তার উপর সকাল সকাল এতো চেচামেচি। নূহী ঘটনাটা বুঝে উঠার আগে হুট করেই সরবের কথা মাথায় চলে আসে।তাকে তো সে রাতেই ঘরে নিয়ে এসেছিলো এখন তো নেই।সে আবার কোথায় গেলো!নূহী আবার বিছানা ছেড়ে দাড়িয়ে যায়।এদিক সেদিক খুজতে নিলে ফোনটা আবার বেজে উঠে।নূহী ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে সরব ফোন করেছে।নূহী ফোনটা তুলে কানে ধরে-শুনছেন আপনি কোই??সরব নূহীর প্রশ্নের উওর না দিয়ে উল্টো নূহীকে প্রশ্ন করে-নূহী তোমার অঙ্কনের সাথে যোগাযোগ আছে আমাকে আগে বলো নি তো?তুমি কি অঙ্কনের জন্যই আমাকে এতো অবহেলা করো??অঙ্কনের জন্যই আমাকে বিনা শর্তে অন্যের হাতে তুলে দিচ্ছো??বেশ তুমি যা চাও তাই হবে!!এইটুকু বলেই সরব ফোনটা রেখে দেয়….. তখন নূহীর মাথায় আসে কাল রাতে সরবের সাথে কথা হওয়ার আগে অঙ্কনের সাথে বেশ কিছুক্ষন ফোনে কথা হয়েছিলো তার মানে সরব ফোনের কনটাক্ট লিস্টে নাম্বারটা দেই রাগ করে চলে গেছেবারান্দায় উল্টো মুখ করে দাড়িয়ে আছে সরব।সারা গায়ে হলুদ মাখানো।একটু আগে মেয়ে বাড়ির লোক হলুদ লাগিয়ে দিয়ে গেছে।আর সরবের গায়ে প্রথম হলুদ লাগিয়েছে নূহী।জ্বী।সেদিন সকালেই নুসরাত নূহীর মা সরবের মা সাফিয়া বেগমের কাছে আসেন উদ্দেশ্য আর অপেক্ষা নয় আজই সব পাকা করতে হবে।অসম্পূর্ন কাজটা সম্পূর্ন করতে হবে।কোনো রকমে নূহীর মা ছুটে ছুটে আসে সাফিয়া বেগমের কাছে।কোনো রকম ভূনিতা ছাড়াই ওনি নিজের মনের কথা জানান সরবের মাকে।”আমি আর দেরী করতে চাই না।কাল পরশুর মধ্যেই সরব বাবা আর নুসরাতের বিয়েটা দিয়ে দিতে চাই।দুজনের মাঝে অম্পূর্ন কাজটা সম্পূর্ন করে আমি দায় মুক্ত হতে চাইছি”এক নাগাড়ে কথাগুলো বলেই দম নেই নূহীর মা।সাফিয়া বেগমও এই প্রস্তাবে বেশ খুশি হন।সাফিয়া বেগম যখন থেকে শুনেছেন কাল সারা রাত সরব নূহীর সাথে ছিলো ওনি কিছুতেই মানতে পারছিলেন না।মনে মনে ভয়ও করছিলো নূহী যদি আবার সরবের কাছে ফিরে আসে।বা সরব যদি নূহীকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে কি হবে তাহলে? কি করে মানবেন ওনি নূহীকে।এসব চিন্তা ভাবনার মাঝে নূহীর মায়ের এই প্রস্তাব ওনার বেশ মনে ধরে।এক কথায় রাজি হয়ে যান সাফিয়া বেগম।ছেলের মা আর মেয়ের মা দুজন মিলে বিয়ের দিন ক্ষন ঠিক করেন।কালই বিয়ে হবে।আর দেরী নয়।অনেক পরিকল্পনা করে ঠিক করা হয় আপাতোতো ঘরোয়া ভাবেই সরব নুসরাতের বিয়েটা দিয়ে দিবে।তারপর দুজনকে বিদেশ পাঠিয়ে নূহীর একটা ব্যবস্থা করতে হবে।সরবের মায়ের সম্মতি পেয়ে নূহীর মা একরকম খুশি হয়েই বাড়ি ফিরে আসে।বাড়ি ফিরেই ওনি আগে নূহীর কাছে যান।নূহী তখন জ্বানালার গ্রীল ধরে আকাশ দেখছিলো।-নূহী-(…)-মা নূহী-(…)ওনি পেছন থেকে নূহীর কাধে হাত দিতেই নূহীর হুশ ফিরে।নূহী এতোক্ষন বেশ অনমনষ্ক ছিলো।-আমাকে ডাকছিলে মা??-হুম্ম-কি ভাবছিলি??-কিছু না।-আমি জানি তুই সরবের কথা ভাবছিলি।-কিছু বলবে!-হুম্ম-বলো-নুসরাত খুব ছোট বেলায় ওর বাবা মারা যায়।তখন তুই তোর মায়ে পেটে।তুই হওয়ার সময় তোর মা ও মারা যায়।আমার আদরের বোনের মেয়ে হিসেবে তোকে আমি কোলে তুলে নিই।একটু একটু করে বড় করতে থাকি।তোর বয়স যখন চার মাস তখন হটাৎ করেই আমার বাবা অসুস্থ হয়ে যায়।বাবা মা খুব চিন্তায় পড়ে যায় আমাকে নিয়ে।একেই তুই ছোট তোর বাবা একা তোকে সামলাতে পারবে না আমিও আমার ছোট্ট নুসরাতকে নিয়ে কোথায় যেতাম।সব কিছু বিবেচনা করে সবাই সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে আবার বিয়ে দেওয়া হবে তাও তোর বাবার সাথে।তুই তখন খুব ছোট ছিলি।-এই কথাগুলো কেন বলছো।-আমি তোর জন্য অনেক করেছি নূহী।জন্মের পর থেকে তোকে আমি লালন পালন করেছি।তোর মায়ের মতো করে তোকে দেখেছি।-জানি তো তাই তো তোমাকে আমি মা বলে ডাকি।-নূহী আমার নুসরাতের জীবন তোর হাতে।-(…)-সরবকে ছেড়ে দে নূহী তোর সামনে হাত জোড় করছি।।।সরবকে ছাড়া আমার মেয়ে বাঁচবে না।আমি আজ সরবের মায়ের সাথে কথা বলে এসেছি কালই বিয়ে দিবো আমার মেয়ে আর সরব বাবার।তুই দয়া কর মা আমাকে।আমি তো তোর মায়ের মতোই….-হুম্ম ঠিকই বলেছো তুমি আমার মায়ের মতোই মা নও….(মুচকি হেসে)-(…)-ভয় নেই আমি এই বিয়েতে বাঁধা দিবো না।তোমার কথা যদি নাই রাখতাম তো সেদিন হাজার অমতের মাঝে ও অঙ্কনের মতো মানুষকে বিয়ে করতাম না……এইটুকু কথা বলেই নূহী সেখান থেকে চলে যায়।ঘরের সদর দরজা পাড় হতেই দেখে নুসরাত বরফের মতো দাড়িয়ে আছে।নূহী নুসরাতের দিকে একপলক তাকিয়ে বলতে থাকে-যা তোমার ছিলো তা তোমারই থাকবে আমি কখনো তোমার কোনও জিনিস তোমার থেকে কারিনি নুসা আপু!!এবারও কারবো না।-নূহীনুসরাতের কথা শোনার জন্য নূহী আর একমুহূর্তও দাড়ায় না।দাড়িয়ে কি লাভ।সবাই তো শুধু একটা জিনিসই চায়।সরব…… সবাই সরবকে চায়।সরবকে নূহীর থেকে কেড়ে নিতে চায়।এদিকেসরবের মা যখন সরবকে বিয়ের কথা বলে তখন সরব আর বাঁধা দেয় না।বাধা দেবে কেন??কার জন্য বাঁধা দেবে।যার জণ্য বাঁধা দিবে সেই তো তাকে চায় না।সেই চায় না ভালোবাসতে তাহলে কিসের এতো যুদ্ধ কিসের এতো অপেক্ষা।।।সরবের বুকের ভেতর যেন একরাশ অভিমানে মেঘ জমেছে সেই অভিমান থেকেই সরব সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যে সে নুসরাতকে বিয়ে করবেই।নূহীকে মুক্তি দিবে সারা জীবনের মতো।সন্ধ্যায় একটা ছোট খাটে গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করা হয় সরবের বাড়িতে।সে অনুযায়ী নুসরাতের মা ও নুসরাতের গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করে আগের বার মেয়েকে ঠিক মতো হলুদ দিতে পারেন নি তাই এবার সেই ইচ্ছেটা পুরোন করতে চান ওনি।নূহী সারা দিন ঘুরে ঘুরে বোনের হলুদের ব্যবস্থা করে।সন্ধ্যেতে একরকম জিদ করেই চলে যায় সরবের বাড়িতে উদ্দেশ্য সরবকে নিজের হাতে হলুদ লাগাবে বলে।সরব নূহীকে দেখে একরকম অবাক হয়ে যায়।সারা বিকেল সরবকে ধাওয়া করেও কেউ সরবের গায়ে এক ফোটা হলিদ ও লাগাতে পারে নি।হলুদের বাটি নিয়ে কেউ সরবের কাছে গেলেই সরব যেন তাকে চিবিয়ে খাবে এরকম একটা ভাব করছিলো।।কিন্তু এই অসম্ভব কাজটা সম্ভব করেছে নূহী।সরবকে না বলেই পেছন থেকে সরবের গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিয়েছে।সরব প্রথমে অগ্নীমূর্তির ন্যায় রূপ ধারন করলেও নূহীকে হলুদের বাটি হাতে দেখে রাগটা যেন দপ করে নিভে যায়।অভীমানের কুয়াশা যেন দলা পাকিয়ে পাহাড়ে পরিনত হয়।এবার আর এই বিয়ে থেকে সরবকে কেউ আটকাতে পারবে না।নূহী নিজেও না।দুনিয়া উল্টে পাল্টে গেলেও সরব নুসরাতে বিয়ে করবেই।এটা হবে নূহী দেওয়া সরবের সবচেয়ে বড় শাস্তিঅবশেষে বিয়েটা সম্পূর্ন হয়েই গেলো।শরিয়তের মতে বিয়েটা সম্পূর্ন হলেও কাগজে কলমে এখনো হয় নি।একরাশ অভিমান নিয়ে দুবার কবুল বলার পর তিনবারের বেলায় গলা আটকে আসে সরবের।দম নিতে কষ্ট হচ্ছে।ইচ্ছে করছে এই আসর এখানেই সমাপ্ত করে দিতে।কিন্তু কোথা থেকে অভিমানের একরাশ মেঘ এসে আবার সরবের মনের আকাশ ঘিরে ধরে।গায়ে হলুদ থেকে শুরু করে সমস্ত নিয়ম নূহী বলে বলে ধরে বেঁধে করিয়েছে সরবকে দিয়ে।যেটা সরব একেবারে মানতে পারে নি।কি করে মানবে….যেই প্রিয়তমাকে পাওয়ার নেশায় একসময় সাত সাগড় তেরো নদী পাড় করে ছুটে এসেছিলো,যাকে ঘিরে হাজার জোছনা বিলাস নিয়ে কেটেছিলো সেই প্রিয়তমায় নিজে থেকে বাঁধন আলগা করে পালিয়ে গেছে।এতো মানা যায় না…. পৃথিবীর কোনো প্রেমিক পুরুষই হয়তো মানতে পারবে না।সরব ডান হাতটা মুষ্টি বদ্ধ করে গড় গড় করে আবারো তিন তিনবার কবুল এক নাগাড়ে বলে ফেলে।সেখানে উপস্থিত সকলেই এক বিষ্ময়ের হাসি হাসে।নিয়ম অনুযায়ী যেখানে তিনবার কবুল বলার কথা সরব বাবাজি সেখানে পাঁচবার বলে ফেলেছে।ভাবা যায়……হয়তো বউ পাওয়া আনন্দে মাথা খারাপ হয়ে গেছে।কথাটা তৎক্ষনাৎ অন্দরমহলে চলে যায়।সেই হিসেবে নুসরাতের মায়ের কানেও যায়।তিনি তখন নিজের ঘরের বিছানায় এলোমেলো ভাবে বসে স্বামীর নাম জব করছিলেন।বিয়ের পরপরই স্বামী হারান তিনি।প্রথম বিধবা হওয়ার শোক অন্য রকম। বিয়ের দশ দিনের মাথায় যখন নূহীর বাবাও মারা যায় তখন তিনি দ্বিতীয় বার বিধবা হন।সেবার তার অবস্থা ছিলো ঠিক বলতে গেলে “অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর”বাপের বাড়ি শ্বশুড় বাড়ি পাড়া প্রতিবেশী সবার অভিযোগ ছিলো এই মহিলা স্বামী খেকো মহিলা।স্বামী সংসার ওর কপালে নেই।ওনি যখন এসব অতীত বর্তমান ভবিষ্যতের অংক কষতে ব্যস্ত তখন কেউ একজন তার কাছে এসে সরবের পাঁচবার কবুল বলার কাহিনি তুলে ধরে।কিন্তু এতে নাফিসা বেগমের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।তিনি ব্যস্ত অংক কষতে।অংকটা মিলে গেছে যেহেতু তার কপালে স্বামী সংসার কিছুই ছিলো না একইভাবে তার মেয়েও আজ সব কিছু থেকে বঞ্চিত হলো।নাফিসা বেগম মনে মনে বলতে থাকে….”সরব কি জানে তার বিয়েটা ঠিক কার সাথে হচ্ছে??হয়তো কাজির মুখে নামটা শুনেই খুশির চোটে পাঁচবার কবুল বলে ফেলেছে।সম্ভব হলে হয়তো আরো পাঁচশ বার বলতো।কিন্তু আমার মেয়ে। তার কি হবে কোথায় খুজবো তাকে??আদোও কি কোনো দিনও খুজে পাবো??”কথাগুলো বির বির করে বলেই কাঁদতে শুরু করেন ওনি।এদিকে বিয়ের কার্যক্রম চলছে।আইনি কর্যক্রম ও ইতিমধ্যে সমাপ্ত হয়ে গেলো।সরব সইটাও করে দিয়েছে বিনা দিধায়।অবশেষে বিয়েটা সম্পূর্ন হয়।সরবকে বিয়ের আসরে নিয়ে যাওয়া হয়।খুব ঘরোয়া ভাবে বিয়ে হলেও আয়োজনের কোনো ত্রুটি নেই।সরব আসরে বসে আছে।এদিকে তার সাথে আসা বরযাত্রীদের মধ্যে একটা চাপা উত্তেজনা কাজ করছে।কিছু একটা নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে বেশ আলোচনা সমালোচনার ঝুড়ি খুলে বসে আছে।সে সব সরবের কানে গেলেও সে দিকে সরবের মনোযোগ নেই।সরবের দুচোখ খুজছে তার প্রিয়োতমাকে।কোই সে,সে কি একবারও আসবে না।না আসবে না।এতোকাল যখন সে নিজে থেকে আসেনি আজও আসবে না।হয়তো আর কখনো আসবে না।হয়তো কেন সত্যিই সত্যি সে আর আসবে না।তার মুখে ভালোবাসি শব্দটা শোনার ইচ্ছে টা সারা জীবন ইচ্ছে হয়েই থেকে যাবে”ভালোবেসে পুড়ে ছারখার তবু ভালোবাসি বলবার নয়”সরবের চোখ থেকে কয়েকফোটা পানি গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে।সরব হাতের উল্টো পাশ দিয়ে মুছে নেয়।কথায় আছে পুরুষমানুষদের কাঁদতে নাই।কাঁদলে নাকি তাদের জাত যায়।কিন্তু বেদনার আরেক রূপই তো চোখের জল……..সরব মাথা নিচু করে বসে আছে।হটাৎ সদূর থেকে নুপুরের ছম ছম আওয়াজ আসছে।সরবের এই শব্দটা খুব চেনা-অচেনা।সরব আস্তে ধীরে চোখ তুলে তাকায়।এক জোড়া আলতা দেওয়া পা।পায়ে এক জোড়া নুপুর।পা দুটো দেখে সরবের বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠে।সরব চোখ তুলে তাকায়।একটা বউ লালটুকটুকে বউ….নূহী। হ্যা এটাতো নূহী।পড়লে লাল বেনারসি। এই বেনারসি টাই তো সরব নূহীকে দেয়েছিলো যদিও শেষ মেষ পড়া হয় উঠে নি কিন্তু….সরব অবাক হওয়ার চরম সীমায়।এক লাফে উঠে দাড়ায় সে….নূহীর দিক থেকে যেন তার চোখ ফিরছে না।নূহীর ঠোটের কোনে হালকা হাসি।কয়েকজন মহিলা এসে নূহীকে ধরে সরবের পাশে বসিয়ে দেয়।এই আসরে তারাই তো বর বউ।[তখন যখন নুসরাতের মা নূহীকে ধরে অতীত ইতিহাস শুনাচ্ছিলে তখন পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে নুসরাতও বেশ মনোযোগ দিয়ে মায়ের কথাগুলো শুনছিলো।যদিও মায়ের মুখে এই কথাগুলো আগেও শুনেছিলো তবুও আজ যেন এই কথাগুলো সোজা নুসরাতের বুকে তীরের মতো লাগে।জন্মের পরই মা কে হারায়।তারপর বাবা।মা যে নূহীকে কখনো নিজের মেয়ে বলে মানে নি তা ও নুসরাতের অজানা নয়।নূহীর সাথে সরবের বেশ আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো তবুও তিনি নূহীকে জোড় করে অঙ্কনের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয় যেটা সে মানতে পারে নি আর আজ মায়ের কথায় নিজের ভালোবাসাকে পেয়েও…. নাহ্ নুসরাতের এতোকাল ঘুমিয়ে থাকা বিবেকটা হটাৎই জেগে উঠে।সে সিদ্ধান্ত নেয় ঠিক বিয়ের আগ মুহূর্তে নূহীকে বউ সাজিয়ে সে পালিয়ে যাবে।সে তাই করেছে।নুসরাত বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।দূরে অনেক দূরে]নূহী কথাটা আগে থেকে জানলেও সরবকে এ নিয়ে কিছুই বলেনি।বললে হয়তো সরবের অন্ধকার মুখে এই আলো দেখতে পেতো না।সেদিন প্রথমবারের মতো নূহী নিজে থেকে সরবের হাতটা শক্ত করে ধরে।সরবও নূহী আবদ্ধ করে নেয় নিজের বাহুডোরে।যেন হাজার চেষ্টা করেও সে ছুটতে না পারে….সরব নূহীকে বাড়িতে নিয়ে গেলে সাফিয়া বেগম রাগে আগুন হয়ে যান।তিনি না তখন নূহীকে মানতে পেরেছে না এখন।তাতে কি সরব নূহী বেশ আছে।ছোট একটা ঘর,একটা সংসার আর সেই ঘর ভর্তি ভালোবাসা।দিব্যি আছে তারা।মাঝে মাঝে শ্বাশুড়ির কটু কথায় তার একটুও কষ্ট হয় না।বরং হেসে উড়িয়ে দেয়….”শ্বাশুড়ি তো মায়ের মতোই হয়।মা বকা দিলে তে ভালোই লাগে”মাঝে মাঝে নূহীর নুসরাতের কথা মনে পড়ে।মনে পড়ে তার অতীতের কথা তবে সে এগুলো নিয়ে ঘাটতে চায় না অতীত তো অতীতই হয়।অতীত নিয়ে কষ্ট পেয়ে কি লাভ।মানুষকে বর্তমান নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে হয়……

সমাপ্ত

Exit mobile version