শরীর টরীর দেখিয়ে ফাঁসালি নাকি 1st part
।। কি দেখিয়ে সরবের মন কারলি শুনি ,তোর তো না আছে রূপ না আছে যোগ্যতা তাহলে!! আমাকে রেখে সরব কেন তোকে বিয়ে করলো বল?এক রাতে কি এমন জাদু করলি সরবকে যে রাত না পেরুতেই আমাকে রেখে তোকে বিয়ে করে নিলো??? ।।
-আপু…..নুসরাত নূহীর দুই বাহু ধরে এক নাগারে কথাগুলো বলেই নূহীকে শরীরের সর্ব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারলো।নূহী ছিটকে গিয়ে মেঝেতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলো…..হাতের কুনুই এ বেশ ব্যাথা পেয়েছে সে!তবুও অপরাধীর ন্যায় মুখ করে তাকায় বড় বোন নুসরাতের দিকে ।
-আপু….?-চুপ কর অপয়া চরিত্রহীনা মেয়ে কোথাকার।পুরুষ মানুষের উপর এতো লোভ তোর যে বড় বোনের হবু বরকে নিজের বর বানিয়ে নিলি??লজ্জা করছে না ঐ মুখে আমাকে আপু ডাকতে….???সাঈদুর চৌধুরী সরব হলো নুসরাত ইমরোজের হবু বর দুদিন পরই তাদের বিয়ে।আজ মেহেন্দি ছিলো।মেহেন্দির অনুষ্ঠান চলা কালিন হটাৎই বিয়ে বাড়িতে আগমন ঘটে হবু বর সরবের।সরবকে দেখে সবাই একরকম ভূত দেখার মতো চমকে উঠে।কেউ কেউ তো সরবকে নিয়ে মজা করতে শুরু করে দিয়েছে….”জামাই বাবু দেখছি বউকে ছাড়া থাকতেই পারছে না তাই ছুটে ছুটে চলে আসছে””তা বাবা একটু সবুর করো আর তো মাঝে এক দিন মাত্র তার পর বউকে এক বারে নিয়ে যেও”সবাই হু হু করে হাসতে শুরু করে দেয়।তবে সরব তখনো গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে আছে। ঠিক তখনি সরবের পেছন থেকে নূহী সবার সামনে আসে।নূহীর পড়নে ছিলো লালটুকটুকে বেনারসি শাড়ি।নূহীকে এভাবে দেখে সবাই একরকম আকাশ থেকে পড়ে।সবাই নূহীকে না না রকম প্রশ্ন করে তবে নূহীকে কিছু বলতে না দিয়ে সরব সরাসরি সবাইকে জানিয়ে দেয় “নুসরাতের সাথে এই বিয়েটা আর হচ্ছে না কারন অলরেডি সে নূহীকে বিয়ে করে ফেলেছে তাই এই বিয়ের সমস্ত জোগাড় জন্তু এখানেই বন্ধ করা হোক“কথাগুলো বলেই সারাব দুম দুম করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।তবে নুহী এখনো সেখানেই ঠায় দাড়িয়ে আছে…..সবার রাগ গিয়ে পড়ে নূহীর উপর।নূহীর মা তো হাতের কাছে থাকা পানির মগটা ছুড়ে মারে নূহীর দিকে।নিজের মেয়ের এতো বড় সর্বনাশ সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না তাও এই অপয়া মেয়েটার জন্য যা কে কিনা সে মেয়ে বলেই মানে না।।মগটা লেগে নূহীর মাথার খানিকটা কেটে যায়।তাতে কারো হেলদোল নেই সবাই তো এখন ব্যস্ত নূহীকে গালমন্দ করতে।সবাইকে অবাক করে হটাৎ করেই বিয়ের কণে নুসরাত উঠে গিয়ে নূহীর হাতটা ধরে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে আসে।তবে অবাক কান্ড হলো এতো কিছুর পরও নূহী মুখ দিয়ে একটা টু শব্দ করে নি।নূহীকে চুপ থাকতে দেখে নুসরাত আবার বলতে শুরু করে-আমি তোর কি এমন ক্ষতি করেছি বল না? তাহলে আমার এতো বড় ক্ষতি কেন করলি বল?তুই কি জানিস না আমি সরবকে কতোটা ভালোবাসি তাহলে ওকে আমার কাছ থেকে এভাবে কেড়ে নিলি কেন???? -আমি…..আসলে আসলে আপু আ আ নূহী আর কোনো কথা বলতে পারে নি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়।নুসরাত নূহীর দিকে একটু এগিয়ে যেতে নিলে নূহীর গায়ের লাল বেনারসিটার দিকে চোখ পড়ে।এই বেনারসিটাই তো সে বিয়েতে পরবে বলে পছন্দ করেছিলো।এই বেনারসিটা পড়েই তো দুদিন বাদে সরবের বউ হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু এই শাড়িটা এখন গায়ে জড়িয়ে রেখেছে তারই ছোট বোন।শুধু কি শাড়ি সে তো তার ভালোবাসার মানুষটাকেও নিজের করে নিলো……”আচ্ছা সরবকে কি সত্যিই সারা জীবনের মতো হারিয়ে ফেললো সে?একটা বিয়েই কি সব কেড়ে নিলো তার জীবন থেকে”কথাগুলো মনে হতেই নুসরাত নূহীর দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে দমদম করে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।নূহী তখনও মেঝেতেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে…..রাতের মাঝা মাঝি জ্ঞান ফিরে নূহীরচোখ খুলেই নূহী নিজেকে সরবের বাহু ডোরে আবিষ্কার করে।সরব নূহীকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে।যেন একটু আলগা হলেই কেউ চুরি করে নিয়ে যাবে।নূহী বেশ কিছুক্ষন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। নূহী পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কঠিন শব্দ শুনেছে এই লোকটার থেকে।নূহীকে অপমান করার একটা ছোট্ট অপশনও সে বাদ দেয় অথচ এই লোকটায় আজকে তাকে জীবনের সবচেয়ে বড় বিপদ থেকে রক্ষা করলো!!নূহী চারদিকে চোখ বোলায়।নাহ্ এই ঘরটা তো সে চেনে না।নূহী সরবের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতেই সরব জেগে যায়….সরব রাগী রাগী চোখে নূহীর দিকে তাকিয়ে আছে-কোথায় আমি?-জাহান্নামে -মানে?-ঘুমিয়ে পড়ুন রাত অনেক হয়েছেকথাগুলো বলেই সরব বিছানা থেকে উঠে যায়-কিসে এতো রাগ আপনার আমার উপর?এতো অপমান করেও কি শান্তি পান নি আপনি আর কি চাই? আমাকে কেন এনেছেন এখানে?-হেই লিসেন সাট আপ!! তুমি বিপদে পড়েছিলে আমি তোমাকে বাঁচিয়েছি।তোমাকে যেমন এ বাড়িতে এনেছি তেমনই বেশি বারাবাড়ি করলে ঘার ধাক্কা দিয়ে বাড়ির বাহিরে বার করে দিবো….আন্ডারস্টান্ড???-(….)-আই হেইট ইউ!!কথাগুলো বলেই সরব ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।নূহী বিছানায় বসে কাঁদতে থাকে।সে তো এই বিয়ে থেকে দূরে সরে ছিলো।দূরে ছিলো সরব আর নুসরাতের জীবন থেকে তাহলে??খালামুনির বাড়ি চলে গিয়েছিল সে।হটাৎই সেই ফোনটা এলো আর……. আচ্ছা অংক কি জানে তার নূহী আজকে অন্যকারো হয়ে গেছে!!আচ্ছা সত্যিই কি সে অন্য কারো হয়ে গেছে???একটা বিয়েই কি সব??নূহীর কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। এতো রাতে সরব কোথায় গেলো??আচ্ছা আমার উপর এতো কিসের রাগ তার??”কে কোথায় আছো দেখে যাও আমার ছেলে এ কাকে বিয়ে করে এনেছে এই মেয়ের না আছে রূপ না আছে গুন।ছেলে ধরা মেয়ে কোথাকার আমার ছেলেকে ফাসিয়ে বিয়ে করা হয়েছে তাই না”এক নাগাড়ে গর গর করে কথাগুলো বলে দম নেয় আফিয়া বেগম।তার সবচেয়ে আদরের ছোট ছেলে হলো সরব।ছেলেকে ভালোবেসে নিজে গিয়ে নুসরাতকে দেখে পছন্দ করে এসেছিলেন তিনি।তার মতে তার ছেলের একমাত্র যোগ্য সহধর্মীনী যদি কেউ হয়ে থাকে সে হচ্ছে নুসরাত নূহী নয়।কিন্তু শেষমেষ কি হলো সেই ছেলেই নাকি এই মেয়েকেই বিয়ে করে আনলো।রাগে গা জ্বলছে তার।-সরব….আমি জানি না তুমি কি করেছো কেন করেছো শুধু এই টুকু জানি এই মেয়েকে আমি তোমার বউ বলে মা নি না মানবো না যেখান থেকে এনেছো সেখানে রেখে এসো যাও।যাও ওকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বার করে দাওসরবকে তীক্ষ্ণ সুরে কথাগুলো বলে ঘুরে দাড়ায় আফিয়া বেগম।হাটা ধরে নিজের ঘরের দিকে।নূহী তখনও দরজায় দাড়িয়ে চোখের পানি ফেলছে।এই একটা বিয়ে কিনা তার সব কেড়ে নিলো একদিকে সে মাকে হারালো একদিকে দিদিকেএতোক্ষন পর মুখ খোলে সরব-মা যেই সিচুয়েশনেই হোক না কেন আমি নূহীকে বিয়ে করেছি এটাই সবচেয়ে বড় সত্যি তাই নূহী এই বাড়িতেই থাকবে….সে আমার বউকথাগুলো বলেই সরব নূহীর হাত ধরে টানতে টানতে নিজের ঘরে নিয়ে যায়।আফিয়া বেগম ছেলের এমন ঘটনায় একরকম হকচকিয়ে গেছেন।”নূহীকে প্রথম থেকেই বেশ অপছন্দ করত আফিয়া বেগম।নূহী দেখতে খুব একটা সুন্দর নয়।গায়ের রংটা শ্যামলা হলেও দেখতে মন্দ নয়।তবে নূহীর রূপের বর্ণনা দেওয়া জন্য তেমন বিশেষ কিছুই খুজে পান না আফিয়া বেগম।লেখাপড়া নিয়েও তেমন কিছু বলার নেই সবে হাই স্কুল পাশ করে কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছে সে এদিকে তার ছেলে বিলেত ফেরত।এই রকম মেয়েকে কি করে মেনে নিবেন তিনি এই ভেবে কোনো কুল কিনারা পাচ্ছেন না আফিয়া বেগম”নূহী ঘরে এসে বিছানায় হাত পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসেছে।কাল রাতে যদি না সে এমন ভূল করতো না এই বিয়েটা হতো না এতো কিছু….মস্ত বড় ভূল করে ফেলেছে সেসরব বেশ কিছুক্ষন তার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।এদিকে নূহী কাঁদতে কাঁদতে হেচকি তুলে ফেলেছে।গাল দুটো লাল টমেটো হয়ে গেছে-কান্না থামাওসরব বেশ ধমকের সুুরে কথাটা বলে নূহীকেনূহী হটাৎ ধমক শুনে চমকে উঠে।এবার কান্নার বেগ বেশ বেড়ে গেছে।-এই মেয়ে চুপ করবা…না কি???-আপনি কি আপু কে সত্যিই বিয়ে করবেন না???-কিহ্???-আমাকে কোথাও একটা রেখে আসুন তারপর আপুকে বিয়ে করে নিন।আমি না থাকলে হয়তো আজ আপনাদের বিয়ে হয়ে যেতো!!-হুম্ম ঠিকিই বলেছো তুমিই এক মাত্র মানুষ যে হুট করে আমাদের মাঝ খানে চলে এসেছো।।।কিন্তু কি করার এখন তো আর কোনো উপায় নেই।তুমি যে আমার সব জায়গাটা দখল করে নিয়েছো।-কি??-কিছু না!!-শুনুন আমার না কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই মা ও ঐ বাড়িতে আমাকে ঢুকতে দিবে না।আমায় আপাতোতো একটু আশ্রয় দিন আমি কলেজ হস্টেলে সিট পেয়ে গেলে সেখানে চলে যাবো আর-আর??-আপনি আপুনিকে বিয়েটা করে নিন আমি চলে যাবো!!!-হেই তোমার এই সব বাজে কথা অফ করে যাও এই সব শাড়ি চেন্জ করে ফ্রেশ হয়ে নাও কাল থেকে একই শাড়ি পড়ে আছো।গো….নূহী কাচুমাচু মুখ করে উওর দেয়-আমার কাছে কোনো শাড়ি নেই জামা কাপড়ও নেই আমি তো আমার ল্যাগেজটাও স্টেশনে ফেলে এসেছি……আর নূহী কথা বলার আগেই সরব অ্যালমারি থেকে একটা প্যাকেট এনে নূহীর হাতে ধরিয়ে দেয়নূহী প্যাকেটটা খুলে দেখে একটা সোনালী পাড়ের কালো শাড়ি। -এটা আপুর জন্য কিনেছিলেন বুঝি??গিফট???নূহীর কথার প্রতি উওরে সরব শুধু একটু মুচকি হাসি দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।পা বাড়ায় মায়ের ঘরের দিকে।মাকে অনেক কিছু বোঝাতে হবে।মাকে অনেক কিছু বলতে হবে……. নুসরাত সেই সন্ধ্যে থেকে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে।সরব ছিলো তার কলেজ লাইফের বন্ধু বেশ ভালোই বন্ধুত্ব ছিলো দুজনের।কলেজ পাশ করার পর দুজন এক সাথে কানাডায় স্কলারশিপ পায়।ব্যাস দুজন একসাথে উড়াল দেয় বিদেশে।একসাথ থাকতে থাকতে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব তারপর সেটা কি করে ভালোবাসার রূপ নেয় তা নিজেও জানে না সে।বিদেশে পড়াশুনার পাট চুকিয়ে দেশে ফিরে আসে দুজন। মাঝে বেশ কিছু দিন কোনো নুসরাতের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখে নি সরব।এসময়গুলো বেশ খারাপ কেটেছে নুসরাতেরতারপর হটাৎই একদিন সরবের মা এ বাড়িতে আসে নুসরাত সরবের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।নুসরাত যেন হাতে সাত রাজার ধন পায়।এক কথায় বিয়েতে রাজি হয়ে যায় নুসরাত।তারপর একেবারে এঙ্গেজমেন্টের দিনে সরবকে দেখেছিলো নুসরাত।আর আজ বিয়ে ছিলো।তবে বিয়েটা হলো না।তীরে এসে ভালোবাসা নামক তরীটা ডুবে গেলো তার।যদি নূহী মাঝে চলে না আসতো তাহলে হয়তো এতোক্ষন সে বিয়ের জন্য তৈরী হতো।বউ সেজে অপেক্ষা করতো সরবের জন্য।আচ্ছা সরবও তো আমাকে ভালোবাসে তাহলে সে নূহীকে কেন বিয়ে করলো কেন???? এরকম শত শত প্রশ্ন মাথার মধ্যে কিল বিল করছে তার।কোনো কূল কিনারা না পেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পরে সে উদ্দেশ্য সরবের বাড়ি যাবে সে।সরবকে সরাসরি প্রশ্ন করবে কিসের এতো দরদ তার নূহীর উপর??? কেন করলো সে নূহীকে বিয়ে??কাল রাতে নূহী যখন অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলো তখন কেন সে নূহীকে সবার সামনে কোলে করে নিয়ে গেল কেন???পৃথিবীতে কি ছেলের অভাব পড়েছিলো যে নিজের বোনের সংসার ভেঙ্গে নিজের সংসার গড়তে হলো??হটাৎ নূসরাতের কথা শুনে সরব নূহী দুজনেই থতমত খেয়ে যায়।এরকম একটা সময় হুট করে নুসরাত চলে আসবে এটা দুজনের কেউই আশা করে নি।।[একটু আগে]সকালে….বেশ বেলা হয়ে গেছে।সূর্য মাথার উপর দপদপ করে জ্বলছে।সরব ধরপর করে উঠে পড়ে কাল বেশ রাত করে ঘুমিয়েছে কারণ নূহীকে বিছানা ছেড়ে দিয়ে সোফায় শুতে হয়েছে তাকে তাই ঠিক করে ঘুমোতেও পারে নি।কিন্তু এতো এতো বেলা হলো কেউ ডাকতে ও এলোনা।আনমোনে কথাগুলো ভাবতেই সরবের চোখ যায় বিছানার দিকে।নূহী গুটি শুটি মেরে শুয়ে আছে।সরব নূহীর দিকে একপলক তাকিয়ে মুচকি হেসে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।একটা লম্বা সাওয়ার নিয়ে বের হতেই দেখে নূহী ঢুলু ঢুলু চোখে বিছানায় বসে আছে।সরবকে বের হতে দেখে নূহী উঠে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।সরবের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় হটাৎ করে পা পিছলে সরবের বুকের উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে।সরবও নূহীকে জড়িয়ে নেয়।ডুব দেয় নূহীর চোখের মাঝে।সরবের দৃষ্টি নূহীর চোখের অতলে বার বার তলিয়ে যাচ্ছে।এমন সময় নুসরাতের অগমনে দুজনই হকচকিয়ে যায়।সরব নূহীকে ছেড়ে দিয়ে ছিটকে দূরে সরে যায়নুসরাত সরবের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকায় নূহীর দিকে….নূহী ভয়ে গুটিশুটি মেরে দাড়িয়ে আছে।সরবের সাথে নূহীর এভাবে লেপ্টে থাকা যে নুসরাত মানতে পারছে না তা সে বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছে।নুসরাত নূহীর কাছে গিয়ে এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে দূরে সরে আসে।নূহী অপরাধীর ন্যায় নুসরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।-নুসু আপু তোমার কি আমাকে ওমন মনে হয়??-না মনে হয়ে আর কি করার আছে বল তো এই ঘর টা আমার হবার কথা ছিলো কিন্তু তার দখল তুই নিয়ে নিলি।এখন তো আমার প্রিয় মানুষটার দখলও তুই নিয়ে নিলি।বোন হয়ে নিজের বোনের এতো বড় সর্বনাশ কি করে করলি বল তো????-আপু মানুষের জীবনে এমন অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে।সেগুলো কে মেনে নিতে হয়।তবে তুমি ভেবো না আমার এই দুঃস্বপ্নের দায় ভার তোমাকে নিতে হবে না যা তোমার তা তোমারইদুই বোনের কথার মাঝে সরব নিরব দর্সক মাত্র।তবে নূহীর কথাগুলো নুসরাত না বুঝলেও সরব ঠিক বুঝতে পেরেছে।নূহী নুসরাতকে কথাগুলো বলেই ঘর থেকে চলে যায়সরব নুসরাতের দিকে এগিয়ে আসতেই নুসরাত সরবের কলার ধরে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। -কেন করলে এমন হুম্ম আমার সাথে??-কি করেছি আমি?এমন করছো কেন??-তুমি জানো না তুৃমি কি করেছো?-আমি যাই করি না কেন কোনো অন্যায় করি নাই-তাই না কি??-হুম্ম-তুমি নূহীকে কেন বিয়ে করলে?কেন আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে দিলে??যদি তুমি এমন না করতে তাহলে আজ আমি এখানে তোমার ঘরে থাকতাম তোমার বউ হয়ে….কিন্তু তুমি-(…)সরব নুসরাতকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু নুসরাত সরবকে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নেয়।-সরব তুমি কি জানো না নূহীর অতীত তাহলে??? তাহলে সব জেনে শুনে ওকে….!!!-লিসেন…..নুসরাত পরিস্থিতি সব কিছু বদলে দেয়।আমি আমরা শুধু মাত্র পরিস্থিতির স্বীকার মাত্র।এই বিয়েটাও শুধু মাত্র…-ওহ্ তাই… তার মানে তুমি আমাকেই ভালোবাসো তাই তো??নূহী ইচ্ছে করে বিয়ে করো নি??? এটাই তো??-হ্যা মানে ন….এবার রূমঝূম নূপুরের শব্দে দুজনই চমকে যায়।পর্দার আড়াল থেকে কেউ একজন ছুটে পালিয়ে গেল।সরব বেশ বুঝতে পারছে নূহী হয়তো এতোক্ষন পর্দার আড়ালে দাড়িয়ে দাড়িয়ে তাদের কথা শুনছিলো।অতীতের কথা শুনে হয়তো খারাপ লেগেছে।তাই সরব ও যেতে নিলে নুসরাত আবার সরবের হাত টেনে ধরে….-কি গো ভালোবাসো না?এবার রাগ যেন সরবের মাথায় চড়ে বসে।সজোড়ে নুসরাত কে ধাক্কা দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।এদিকে নূহী এক ছুটে নিচে নেমে আসে।নিচে নামতেই দেখে এক জোড়া চোখ তার দিকে তীক্ষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।নূহীর শ্বশুড়ী নূহীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চোখ দুটো যেন আগুনের মতো দপদপ করে জ্বলছে।যদি পারতো চোখ দিয়ে এখানেই ভষ্য করে দিতো।নূহী আর এক পা না এগিয়ে ওখানেই দাড়িয়ে যায়…..নূহীর শ্বাশুড়ি গুটি গুটি পায়ে নূহীর সামনে দাড়ায়….।।।রাগে হিস হিস করতে করতে বলে -আচ্ছা বেহায়া মেয়ে মানুষ তো তুমি….একেই এতো বেলা করে ঘুম থেকে উঠলে তার উপর এভাবে নেচে নেমে এলে শাড়ি কাপড়ের ঠিক ঠিকানাও তো নেই…. লজ্জা শরম তো তোমার আগে থেকেই কম জানতাম এতো কম সেটা জানতাম না!! ছি ছি!! ইচ্ছে করছে তোমাকে এখনি ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিই!!সরব! সরব! কথাগুলো বলেই নূহীর শ্বাশুড়ি নূহীকে এড়িয়ে উপরে উঠতে থাকে উদ্দেশ্য ছেলের ঘর…আজই ছেলের সাথে কথা বলবে সে এখনই।।নুসরাত ও আছে।কথা বলে বোনের সাথে বাড়ি পাঠিয়ে দিবেন ওনি!!সরবের মা ঘরে ঢুকতেই দেখে সরব বেশ রেগে মেগে ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলো। আর নুসরাত বিছানায় হুমড়ি খেয়ে পড়ে আছে।হটাৎ মা কে দেখে থেমে যায়।সরব কিছু বলার আগেই সাফিয়া বেগম বেশ ভার গলায় বলে উঠে….-নুসরাত কোথাই???সরব মার দিকে একপলক তাকিয়ে বলে উঠে-ঘরেই আছে!!-চলোআর কথা না বাড়িয়ে সাফিয়া বেগম সোজা সরবের হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে যান…ঘরে এসে দেখে নুসরাত বিছানার এক কোনায় পড়ে পড়ে চোখের জল ফেলছে।নুসরাতের দিকে এক পলক তাকিয়ে ওনি আবার সরবের দিকে দৃষ্টি দেন-নুসরাত কাঁদছে কেন???-(..) -কি হলো বলো!!-সরব কিছু বলার আগেই সরবের মা নুসরাতকে উদ্দেশ্য করে বলতে শুরু করে….-আমি হয়তো বুঝতে পারছি তুমি কেন কাঁদছো।তবে তুমি যেই কারণে কাঁদছো সেই কারণটাকেই আমি মুছে দিতে চাইছি!!সরবের মায়ের কথায় এবার নুসরাত বেশ আগ্রহী হয়ে তাকায়!!-তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম সেদিনই বুঝে নিয়েছিলাম তুমিই আমার সরবের যোগ্য। তাই আগে পিছে না জেনে সরবের সাথে তোমার বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম।কিন্তু…..যাই হোক সরব বিয়েটা নিজের ইচ্ছেই করে নি।আমার সরবকে আমি চিনি নিশ্চয় কোনো কারণ ছিলো তাই করেছে….নুসরাত আরো আগ্রহী হয়ে সরবের মায়ের কথা শুনতে থাকে এতোক্ষনে কান্না কান্না ভাবটা চলে গেছে চোখে মুখে ফুটে উঠেছে কৌতূহল। সাফিয়া বেগম আরেকটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করে….-আমার ছেলের নখের যোগ্যতাও তোমার বোনের নেই।যোগ্যতার কথা না হয় বাদ ই দিলাম তোমার ঐ ডিভোর্সি বোনকে আমি কখনোই আমার ছেলের বউ বলে মানি না!!তুমি তোমার বোনকে নিয়ে যাও।-আসলে -দেখো নুসরাত এতো আসল নকল আমি বুঝি না। তুমি তোমার বোনকে নিয়ে যাও না তার পর তোমার বাবা মার সাথে কথা বলে আমি অসম্পূর্ন কাজটা আবার সম্পূর্ন করবো।যাও নিয়ে যাও তোমার বোনকে…..কথাগুলো বলে সরবের মা নুসরাতের হাত ধরে নিয়ে যায়।উদ্দেশ্য নূহীর কাছে যাওয়া।নূহীকে বেশ কিছু কথা শুনিয়ে বাড়ি থেকে বিদায় করবে সে…..নুসরাত আর শ্বাশুড়িকে একসাথে সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে দেখে নূহী বরফের মতো দাড়িয়ে যায়।এতোক্ষন সে এ পাশ থেকে উপাশ পায়চারী করছিলো।।নুসরাত নূহীর মুখোমুখি হতেই নূহী মাথা নিচু করে বলে উঠে…-নুসু আপু আমি জানি তোমরা কি চাইছো।আমি তৈরী আছি চলো আমি বাড়ি যাবো।নুসরাত কিছু বলতে যাবে তার আগেই নূহী বলে উঠে -আমি আসার সময় নিজের সাথে কিছুই নিয়ে আসিনি তাই নিয়ে যাওয়ার মতোও কিছু নেইকথাগুলো বলেই নূহী পা বারায়। হটাৎ পেছন থেকে কেউ একজন তার হাত টেনে ধরে…..[সরব এতোক্ষন নিরব দর্শকের ন্যায় সবার কথা গুলো শুনছিলো তবে নূহী নুসরাতের সাথে বাড়ি যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই খপ করে নূহী হাতটা ধরে নেয়।এরকম কান্ডে একদিকে যেমন সবাই অবাক তেমনই অন্য দিকে সরব নিজেও যথেষ্ট অবাক।তবে সরব সামান্য তম বিচলিত না হয়ে বলতে শুরু করে-নূহী শরিয়ত বলো আর আইনত বলো দুই ভাবেই আমার স্ত্রী তাই আমি নূহীর দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারি না।নূহী কোথাও যাবে না!!কথাগুলো বলেই সরব নূহীকে টেনে ঘরে নিয়ে যায় এদিকে সরবের মা আর নুসরাত দুজনই অবাক হয়ে সেখানে দাড়িয়ে আছে।সরব সবার সামনে দিয়ে নূহীকে ঘরে নিয়ে গিয়ে দুম করে দরজা বন্ধ করে দেয়।নুসরাত আর এক মুহূর্তও সেখানে দাড়ায় না।গট গট করে বেরিয়ে যায়।জীবন তাকে এক অদ্ভুত পরিস্থিতিতে এনে দাড় করিয়েছে যেখানে দাড়িয়ে তার নিজের বোনের জন্য কোনো দয়া বা ভালোবাসা কাজ করছে না কাজ করছে শুধু রাগ অভিমান আর হিংসে…..তবে নূহীর প্রতি এই হিংসের একমাত্র কারণ সরব।যা আগেও ছিলো আর এখনো আছে…..!!নিজের মনে মনে কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নুসরাত হাটা ধরে বাড়ির পথে…..এদিকে সরব নূহীকে ঘরে এনে দুম করে দরজা বন্ধ করে দেয়।নূহী অন্য দিকে মুখ করে দাড়িয়ে আছে…গাল বেয়ে পানি পরছে।-কেন করলেন?-কি করলাম??-আমাকে যেতে দিলেন না কেন??-বাড়িতে গেলে তুমি ভালো থাকবে!!-আমার ভালো থাকা নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না!!আপনি আমাকে বাঁচিয়েছেন তবে প্লিজ আমার জন্য আমার আপুকে কষ্ট দিবেন না।আমার আপু আপনাকে অনেক ভালোবাসে…..আমার জন্য আর কিছুই করতে হবে না-হেই লিসেন আমি তোমার জন্য কিছুই করি নি একজন মানুষ হিসেবে যাস্ট নিজের দায়িত্ব পালন করেছি।।।-কিন্তু আমাদের বিয়েটা তো…..-চুপ….আর একটা কথাও না।।সরব ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।কেন যেন তার ভেতর ভেতর বেশ অস্থির লাগছে।এদিকে নূহীও চুপ চাপ বারান্দায় গিয়ে দাড়ায়।আকাশ পানে তাকিয়ে নিজের মনে মনেই বলতে থাকে”তুমি ভালো থাকো সরব ভাই খুব ভালো থাকো। আমি কখনো তোমার কাছে কিছু চাই নি আজো চাইবো না।তুমি ভালো থাকো তোমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে।তোমার দয়া আমার চাই না”