Site icon অপরাজিতা

অপরাজিতা  

নিজের থেকে পাঁচ বছরের ছোট কোন ছেলের থেকে প্রেম প্রোপোজাল পেয়ে তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল প্রিয়তা

নিজের থেকে পাঁচ বছরের ছোট কোন ছেলের থেকে প্রেম প্রোপোজাল পেয়ে তব্দা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইল প্রিয়তা।তার এখন ঠিক কি ধরনের রিয়্যাকশন দেওয়া উচিত তা সে খুজে পেলো না। তীক্ষ্ণ চোখে সে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে পর্যবেক্ষণ করলো। পরনে থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট সাথে ঢোলাঢালা টি শার্ট। চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে। ফর্সা মুখটা ফুলে আছে। চোখ দুটো টকটকে লাল। হয়তো ঘুম থেকে উঠেই চলে এসেছে। এখন কেবল সকাল সাতটা। আশপাশে তেমন একটা লোকজন চোখে পড়ছে না। প্রিয়তা একটি প্রাইমারি স্কুলের টিচার। স্কুল শুরু হবে ঠিক নয়টায়। বাড়ি থেকে স্কুল অনেকটা দূরে হওয়ায় তাকে হাতে সময় নিয়ে বের হতে হয়।

‘আপনার দেরি হচ্ছে।’

ছেলেটার কন্ঠে প্রিয়তা নড়েচড়ে উঠলো। হাত ঘড়িতে সময় দেখতেই তার চোখ কপালে। এই ছেলেটা অলরেডি আধঘন্টা সময় খেয়ে নিয়েছে। আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা না করে প্রিয়তা সামনের দিকে পা বাড়ালো।

‘উত্তরটা?

প্রিয়তার পা জোড়া থেমে গেলো। অতিরিক্ত রাগে তার মুখ লাল বর্ণ ধারন করেছে। সে যেন এই মুহূর্তে ছেলেটিকে পিষে ফেলতে চাইছে এমন ভাবেই সে পেছন ফিরে তাকালো। ছেলেটি নির্লিপ্ত ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে যা প্রিয়তাকে আরো রাগিয়ে দিলো।

‘তুমি সিক। তোমার উচিত ভালো কোনো মানসিক ডাক্তার দেখানো। ইডিয়েট।’

আর কোনো কথা না বলেই সেখান থেকে গটগট করে হেঁটে চলে গেলো প্রিয়তা। আজ পুরো দিনটা তার খারাপ কাটবে।

প্রিয়তা চলে গেলেও ছেলেটা সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল। ঠিক ততসময় যতসময় প্রিয়তাকে যেতে দেখা যায়। প্রিয়তা চোখের আড়াল হতেই সে বাড়ির পথে পা বাড়ালো। আর একটু ঘুমিয়ে নেওয়া দরকার।

প্রিয়তা তার মামা মামির সাথে থাকে। খুব ছোট থাকতে মা কে হারিয়েছে। মা মারা যাওয়ার পর বাবাও কেমন পর হয়ে গেলো। চল্লিশ দিন না হতেই নতুন বিয়ে করে আনলো। ছোট্ট প্রিয়তা যখন মায়ের জন্য কান্নাকাটি করছিলো তখন তার বাবা তার সদ্য বিবাহিত বউকে দেখিয়ে বলেছিলো সে প্রিয়তার জন্য নতুন মা কিনে এনেছে। পুরোনো মা পঁচা। এই মা তাকে অনেক ভালোবাসবে। কিন্তু তার বাবার বলা প্রত্যেকটা কথাই ছিল মিথ্যা। তার এই মা কখনোই তাকে ভালোবাসেনি। ছয় বছর বয়সী ছোট্ট প্রিয়তাকে কোনো কারণ ছাড়াই খুব মারধর করতো। প্রিয়তার নানু প্রিয়তাকে তার কাছে নিয়ে এলো। এরপর তার দিনগুলো ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু তার বয়স যখন ১১ তখন তার নানু ও পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল। প্রিয়তা একা হয়ে পড়ল। নানু ছাড়া তাকে দেখার মতো আর কেউ ছিলো না। তার জায়গা হল মামা মামির সংসারে। প্রথম প্রথম সব ঠিক থাকলেও প্রিয়তা আস্তে আস্তে বুঝতে পারল এ পরিবারেও সে বোঝা হয়ে উঠছে। কিন্তু ততদিনে প্রিয় তা বুঝতে শিখে গেছে। সে জানতো এর থেকে ভালো জায়গা তার আর কোথাও মিলবে না। তাই হাজার অবজ্ঞার শিকার হয়েও মাটি কামড়ে পড়ে রইলো মামা মামির সংসারে। আর কোথায় বা যাবে সে?

কাজ শেষ করে বের হতেই প্রিয়তার দেখা হলো নিখিলের সাথে। পাশের উচ্চবিদ্যালয়ের ইংরেজির শিক্ষক নিখিল। নিখিলের সাথে প্রিয়তার পরিচয় খুব বেশি দিনের না। এক ট্রেনিং সেন্টারে তাদের পরিচয় হয়। এরপর থেকে দেখা হলেই নিখিল খুব নম্র ভাবে তার সাথে আলাপ করে। যদিও প্রিয়তা সবসময় নিখিলকে এড়িয়ে যেতে চায় কিন্তু লোকটা একটু বেশিই কথা বলে। তার কথাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া খুব কষ্টদায়ক। নিখিলের অনেক জোর করায় প্রিয়তা বাধ্য হয়েই পাশের এক কফি শপে বসে। হাত ঘড়িতে সময় দেখতেই দেখলো বিকেল প্রায় সাড়ে পাঁচটা বেজে গেছে। বাসায় ফিরে তাকে রাতের জন্য রান্না করতে হবে। কিছু পরিক্ষার খাতা দেখাও বাকি আছে। এই মুহূর্তে নিখিলকে তার বোঝা ছাড়া কিছুই মনে হলো না। প্রিয়তা ঠিক করে নিল এটাই শেষ। এরপর নিখিল কথা বলতে আসলে সে মুখের উপর বলে দিবে, দেখুন আপনি আমার সাথে এভাবে সেধে আলাপ করতে আসবেন না। আমার আপনার সঙ্গ একদমই পছন্দ নয়। আপনি যদি পরবর্তীতে আমাকে ইগনোর করে চলেন তাহলে খুবই আনন্দিত হইবো।

‘মিস কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো!’

হঠাৎ কথাটা শুনে সম্বিত ফেরে প্রিয়তার। প্রিয়তা একটু লজ্জা পায়। কারো সম্মুখে এভাবে অন্যমনষ্ক হওয়া ভিষণ লজ্জাজনক। প্রিয়তার সলজ্জ ভঙ্গিতে বলল,

‘সরি একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম।’

নিখিল কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে অল্প হাসলো। সে বেশ কিছুক্ষণ ধরে প্রিয় তাকে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিল। সুযোগ পেতেই সে বলল,

‘মিস যদি সময় হয় সানডে একটু বের হওয়ার টাইম হবে?’

প্রিয়তা চোখ তুলে তাকাতেই নিখিল আমতা আমতা করে বলল,

‘আসলে আমার বোন ফ্রান্স থেকে ফিরছে। ওর জন্য একটু কেনাকাটা করা দরকার ছিলো। মেয়েদের জিনিস কেনার অভ্যাস নেই আমার। তাই আর কি! আপনার আপত্তি থাকলে ইটস্ ওকে।’

প্রিয়তা চেয়েও না করতে পারলো না।

‘আমি পরে জানাবো।’

প্রিয়তার কথায় নিখিল দম ছেড়ে হাসলো। এক মুহুর্তে সে ভেবেছিল প্রিয়তা হয়তো না করে দিবে। এই রমনীর মুখে না শোনাটা তার জন্য খুবই বেদনাদায়ক।

প্রিয়তা যখন‌ ফিরলো তখন সন্ধ্যা সাতটা। স্কুল শেষে টিউশন করিয়ে একবারে বাসায় আসে সে। বাসায় আসতেই সে শুনতে পেলো তার মামি সুজলা মামাতো বোনটার সাথে চিল্লাপাল্লা করছে। গায়েও হয়তো হাত তুলছে। প্রিয়তা হাতের ব্যাগটা সোফায় রেখে দৌড়ে গেলো রুমে। তুলি মেঝেতে বসে কাঁদছে। মামির হাতে লাঠি। প্রিরতা দৌড়ে যেয়ে তুলিকে আগলে ধরলো।

‘কিছু হয়েছে মামি?’

অমনি সুজলা খেকিয়ে উঠলো।

‘কিছু হওয়ার বাদ আছে? কালে ধরেছে আমার সংসার। খাইয়ে দাইয়ে ঘরে কাল পুষছি কিনা! কাল আমার সব শেষ করে দিলো। আমার ছেলে মেয়েগুলোর মাথাও খেয়েছে কালে।’

সুজলা প্রিয়তাকে উদ্দেশ্য করে আরো কিছু কথা বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। প্রিয়তার বাড়িতে দেরিতে ফেরার ব্যাপারে কথা বলতেও ছাড় দেননি তিনি। প্রিয়তা মাথা নিচু করে সব শুনল কেবল। তুলি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

‘আপু তুমি কেন এগুলো সহ্য কর বলোতো? তুমিকি ফ্রি ফ্রি থাকো? মাস শেষে বেতনের সব টাকা তাদের দিয়ে দাও। তাও তারা এত কথা শোনায় তোমাকে। এই টাকা দিয়ে তো তুমি বাইরে কোথাও বাসা নিয়ে থাকতে পার। তুমি একটা বাসা নিলে আমিও তোমার সাথে চলে যাব। ভালো লাগে না আমার এখানে।’

‘হূস পাগল। এসব বলতে নেই। গুরুজনরা একটু আধটু অমন বকে। তাই বলে রাগ করতে নেই।’

কিন্তু তুলি তার কথায় কান দিল না। সে একে একে নানা অভিযোগ করতে লাগলো। প্রিয়তাও সুন্দর করে তাকে বোঝাতে লাগলো। যদিও মাঝে মধ্যে প্রিয়তার নিজেরই ইচ্ছে হয় এ বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে যেতে। কিন্তু এতগুলো বছর যারা তাকে বড় করলো তাদের সাথে এমনটা করতে তার বিবেক বাঁধা দেয়।

ঘড়িতে রাত দশটা। প্লেটে খাবার নিয়ে ছেলের জন্য বসে আছেন শাকিলা। এ বাড়িতে নয়টার মধ্যে রাতের খাবার খাওয়ার নিয়ম। তরিকুল সাহেব এ ব্যাপারে ভিষণ কঠোর। কিন্তু তার কথা সকলে মান্য করলেও তার একমাত্র ছেলেই তার কথার অমান্য করে। বাড়ির খুব কঠোর নিয়মের মাঝেও ছেলেটা কিভাবে এত বেপরোয়া হলো সেটা সে খুঁজে পায় না। শাকিলা ভিতু নয়নে বারবার সদর দরজার দিকে দৃষ্টিপাত করছে। ছেলেটা এখনো ফেরেনি। আজ তরিকুল সাহেব মোটেই ছেলেকে ছেড়ে কথা বলবেন না। সে তার রুমেই অতি আদরে বাঁদর হওয়া ছেলের জন্য অপেক্ষা করছে। আজ এক চরম শিক্ষা দিবেন তিনি ছেলেকে।’তোমার আচরণ আমাকে বারবার হতাশ করছে। তোমার কি মনে হয়না তোমার আচরণ পরিবর্তন করা উচিত?’

‘জি মনেহয়।’

ছেলের এমন সহজ স্বীকারোক্তি হজম হতে চাইল না তারিকুল সাহেবের। এমন স্বীকারোক্তি পরে কেমন কথা বলা উচিত সেটাই ভাবছেন তিনি। আজ তিনি খুব পাকাপোক্ত ভাবেই প্রস্তুত হয়ে এসেছিলেন ছেলেকে কিছুটা ধমকি ধামকি দেওয়ার জন্য। কিন্তু তার ছেলে খুব সুন্দর ভাবেই তার সাজানো গোছানো আয়োজে ঠান্ডা পানি ঢেলে দিয়েছে। ছেলের চতুরতা তাকে বরাবরের মতই হতাশ করলো। পৃথিবীর সকল বাবা যেখান একজন চতুর সন্তানের আশা করে সেখানে তরিকুল সাহেব ভাবেন এর থেকে একটা গর্ধোবকে মানুষ করা তার জন্য সহজ ছিল। অন্তত সে তার কথা মান্য করে চলত। এই ছেলেকে নিয়ে চিন্তা করতে করতেই তার কিলো চুলে পাক ধরেছে। হতাশ চিত্তে তরিকুল সাহেব বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন। নিজের কামরার দিকে যেতে যেতে ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

‘ভেব না তুমি আমাকে পরাজিত করতে পেরেছ। এবার তোমার ভাগ্য তোমায় সাহায্য করেছে। পরবর্তীতে তোমার বাঁচার সব রাস্তা আমি বন্ধ করে দিব।’

তরিকুল সাহেব যেতেই শাকিলা দম ছেড়ে বাঁচলো। আজ কোনো যুদ্ধ না বেঁধে যায় এমনটা ভেবেই তিনি মাথার ঘাম পায়ে ফেলছিলেন। ছেলের গালে ভাত তুলে দিতে দিতে শাসনের স্বরে তিনি বললেন,

‘কতবার তোমাকে এমন করতে না করেছি? তোমাদের বাবা ছেলের যন্ত্রণায় আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। দ্বিতীয়বার আর আমি তোমায় ক্ষমা করবো না বলে দিলাম।’

মায়ের বাধ্য ছেলের মত আয়াজ মাথা নাড়িয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। শাকিলাও আর কিছু বলতে পারলো না। ছেলেটার সুন্দর মুখটার দিকে তাকালে সে আর রাগ করে থাকতে পারে না। এমন চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য ছেলেটা তার বাবার কাছ থেকে পেয়েছে। তরিকুল সাহেব ইয়াং টাইমে এমন সুদর্শন ছিলেন। শাকিলার এখনো মনে আছে যেদিন তরিকুল সাহেব তাকে দেখতে গিয়েছিল সেদিনের কথা। এত মুরব্বিদের সামনেও শাকিলা লজ্জার কথা ভুলে হা করে তাকিয়ে ছিল। পরে এ নিয়ে কত লজ্জাই না তাকে পেতে হয়েছে!

খাওয়া শেষে রুমে এসে লম্বা করে বিছানায় শুয়ে পড়ল আয়াজ। পুরো শরীর ব্যথায় টনটন করছে। আজ কলেজ মাঠে ফুটবল খেলা ছিলো। বিপক্ষ দল তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ার তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে আয়াজকে আঘাত করেছে। তবে আয়াজ এর বিপরীত কোনো আঘাত তাদের দেয়নি। কারণ তার দেওয়া আঘাত তো এত অল্প হতে পারে না! তার দেওয়া আঘাত ওদের কলিজা পর্যন্ত দাগ বসিয়ে দিবে।

আয়াজ শুয়ে থেকেই ফোন স্ক্রোল করতে লাগলো। প্রিয়তার একাউন্টে যেতেই দেখলো প্রিয়তা দু ঘন্টা পূর্বে একটি পোস্ট করেছে। যেখানে তার পরনে আকাশি রঙের জামদানি শাড়ি। যেটা আজ সকালেই তার পরনে ছিল। ছবিটাযে ক্যান্ডিট তা দেখেই বুঝে ফেলার মতো। প্রিয়তা কোন ভাবনায় বিভোর এমন সময় ছবিটা ক্লিক করা হয়েছে। ক্যামেরা ম্যান যে তার দক্ষ হাতে ছবিটা ক্লাক করেছে সেটা একদম ক্লিয়ার। আয়াজের এটাও বুঝতে বাকি রইল না যে ক্যামেরা ম্যানটা কোনো এক পুরুষ। কেননা প্রিয়তার সামনে থাকা কফি মগে কোনো পুরুষালি অবয়বের প্রতিবিম্ব লক্ষ করা যাচ্ছে। আয়াজের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। দাঁতে দাঁত চেপে হিসহিসিয়ে বলল,

‘অন্য পুরুষের সাথে সময় কাটানোর খুব বড় মূল্য দিতে হবে আপনাকে প্রিয়। এ ব্যাপারে আমি কখনোই বিন্দু পরিমান নরম হবো না। যতটা খুশি উড়ে নেন আর অপেক্ষা প্রহর গুনতে থাকেন। আপনার পাখা ছাঁটার আয়োজন আমি খুব শীঘ্রই করছি।’

প্রিয়তা সবাইকে খাবার দিয়ে না খেয়েই রুমে চলে গেলো। কিন্তু এ নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। সবাই যে যার মতো করে খেতে লাগলো। কাজের মেয়ে রত্না প্লেটে করে খাবার নিয়ে এলো প্রিয়তার জন্য। প্রিয়তা তখন তার ছোট্ট রুমের জানালা ঘেঁষে রাখা টেবিলে ডায়েরির পাতা উল্টাচ্ছিল। রত্না দরজা নক করতেই প্রিয়তা তাকে ভেতরে আসতে বলল।

‘আপা আপনে বোজলেন কেমনে আমি আসচি?’

প্রিয়তা মুচকি হেসে বলল,

‘এই অসময়ে তুই ছাড়া আর কেউ আসেনা আমার রুমে।’

প্রিয়তার কথা শেষ হতেই রত্না খাবার প্লেট প্রিয়তার সামনে রাখলো।

‘আমি নাহয় কামের মাইয়া তাই কেউ আমার দিকে খেয়াল দেয় না। কিন্তু আপনেতো তাগো পরিবারের লোক। আপনের সাথে এমন করে কেন? আপনের মতো শিক্ষিত হইলে আমি কবে এই বাড়ি ছাইড়া চইলা যাইতাম। আপনের মামির মতো দজ্জাল মহিলা আর একটা আমি দেখি নাই। তওবা তওবা।’

প্রিয়তা রত্নাকে চোখ গরম দিলো। রত্না মুখ বাকিয়ে মেঝেতে বসে পড়লো। কিছু একটা মনে পড়তেই বলল,

‘আপা একটা কথা বলবার ভাবছিলাম।’

‘এত ভাবার কি আছে? বলে ফেল।’

‘আপনের রুমে পাটি বিছাই ঘুমাইতে চাইছিলাম। ঐ রান্নাঘরের পাশে থাকতে কেমন যেন লাগে। মনে হয় কেডায় জেন হাঁটে বাড়ির মধ্যে। আপনের রুমে খালি রাইতে রাইতে ঘুমাইতাম।’

‘আচ্ছা।’

‘সত্যি আপা?’

‘হুম।’

‘আপা আর একটা কথা।’

‘বল।’

‘আপনের যে লাল রঙের একটা জামা আছেনা? ঐ যে লাল লাল ফুল? ঐরম একটা জামা আমারে কিইনা দিবেন? আমার বড় আপার বিয়া সামনের মাসে। আব্বায় সকালে কল কইরা বলছে। ছেলের অবস্থা ভালোই। অটো চালায়। আপার লগে নাকি মানাইব।’

‘আচ্ছা দিব।’

রত্না খুশি হলো। প্রিয়তাকে ওর ভালো লাগার অন্যতম কারণ হলো প্রিয়তা ওর সকল আবদার পূরণ করে। রত্নাকে খুশি হতে দেখে প্রিয়তার ও ভালো লাগলো। মেয়েটা মাত্র এগারো বছর বয়সে এ বাড়িতে এসেছে। এখন বয়স পনেরো। এই চার বছরে মেয়েটা একটুও পাল্টায়নি। প্রিয়তা যখন এসব ভাবছিল তখনই প্রিয়তাকে চমকে দিয়ে রত্না বলল,

‘আপা আপনে বিয়া করবেন না? আপনে তো আমার বড় আপার থেইকেও বড়। আব্বায় বলছে এরপর ভালো পোলা পাইলে আমারেও বিয়া দিয়া দিবে আর আপনে এখনো বিয়া করতে পারলেন না।’

প্রিয়তা রত্নাকে ধমক দিয়ে ঘুমাতে বলল। মেয়েটা আজকাল খুব বড় বড় কথা বলে। কবেনা এমন কিছু বলে বসে যা প্রিয়তার সম্মানকে ঢুবিয়ে দেয়।

বেডে শুয়ে কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করেও ঘুম আসলো না প্রিয়তার। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত একটা ছাড়িয়েছে। চারদিক বেশ নিশ্চুপ। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক পরিবেশকে গম্ভীর করে তুলেছে। দূর থেকে দু একটা গাড়ির হর্ন শোনা যাচ্ছে আবার তা মিলিয়ে যাচ্ছে। হাইওয়ে থেকে তাদের বাড়ি অনেকটা ভেতরে হওয়ায় ব্যস্ত শহরের হৈচৈ খুব একটা প্রভাব ফেলতে পারে না। প্রিয়তা বালিশের তলা থেকে হাতরে ফোন বের করে ফেসবুকিং করতে লাগলো। হঠাৎ একটা আইডি থেকে ম্যাসেজ আসলো। প্রিয়তা চেনে না এই আইডির মালিককে। কিন্তু আইডিতে অনেক সুন্দর শিক্ষামূলক পোস্ট দেখেই সে এড করেছিলো তার সাথে। কিছুটা কৌতুহল নিয়ে ম্যাসেজ ওপেন করতেই দেখলো সেখানে লেখা,

‘ রাত অনেক গভীর হয়েছে। ঘুমিয়ে পরুন। রাত জেগে অনলাইনে থাকা মোটেই ভালো কাজ নয়।’

প্রিয়তার কপাল কুঁচকে এলো। এই ব্যক্তি আসলে কে? প্রিয়তা ঝটপট টাইপ করল,

‘কে আপনি?’

প্রায় সাথে সাথেই সিন হলো। যেন ওপারের ব্যক্তি তার ম্যাসেজের অপেক্ষাই করছিল। উত্তর এলো।

‘আপনার অপ্রিয় কেউ।’

‘এটা আবার কেমন পরিচয় দেওয়ার ধরন?’

আর রিপ্লাই এলো না। প্রিয়তা এক দুই করে দশ মিনিট অপেক্ষা করলো। কিন্তু আর কোনো উত্তর এলো না। প্রিয়তা কিছুটা কৌতুহল বোধ করলো এই ব্যক্তির প্রতি। কিন্তু অনেক রাত হওয়ায় সে আর জেগে থাকতে পারলো না। তাছাড়া তাকে তার শরীরকেও কিছুটা বিশ্রাম দিতে হবে। ফোনের নেট অফ করে সে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো। সকালে স্কুল আছে। আর রাত জাগা ঠিক হবে না। কিছুক্ষণের মাঝেই গভীর নিদ্রায় তলিয়ে গেল প্রিয়তা।অনেকক্ষণ খুঁজে একটা মেরুন রঙের শাড়ি পছন্দ করলো প্রিয়তা। শাড়িটা সত্যিই চোখে লাগার মতো। নিখিলের দিকে শাড়িটা এগিয়ে ধরতেই নিখিল বললো,

‘ম্যাডামের চয়েজ তো দেখছি সত্যিই প্রশংসনীয়।’

প্রতিউত্তরে প্রিয়তা মুচকি হাসলো মাত্র। দোকান থেকে বেরিয়ে তারা মেইন রোড ধরে হাঁটতে লাগলো। নাখিল কিছু বলার জন্য উশখুশ করতে লাগলো।

‘ম্যাডাম চলুন কোনো ক্যাফেতে বসা যাক।’

প্রিয়তা আপত্তি জানালো। নিখিলের মুখ করুণ দেখালো। সে অনুরোধ করে বলল,

‘অন্তত এক মুঠো বাদাম তো খাবেন!’

প্রিয়তা রাজী হলো। রাস্তার ওপারে বাদাম বিক্রি করছে। নিখিল সন্তুষ্ট চিত্তে বাদাম আনতে ওপারে গেছে। প্রিয়তা দাড়িয়ে রইল একা। ভাপসা গরমে তার নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।

‘আপনি অন্যপুরুষের সাথে ঘুরবেন না। কষ্ট হয় আমার।’

পাশ থেকে এমন কথা শুনে চমকে তাকায় প্রিয়তা। গম্ভীর মুখ করে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়াজ। প্রিয়তার কেন যেন এই ছেলেটাকে ভয় লাগলো। ছেলেটাকি রেগে আছে? কিন্তু কেন? এত অধিকার বোধ আসছে কোথা থেকে? প্রিয়তা যথাসাধ্য নিজেকে কঠিন করে উত্তর দিলো,

‘আমি কি করছি সেটা আমি জানি। তোমাকে না ভাবলেও চলবে। আমার সামনে আর কখনো আসবে না।’

আগের থেকেও গম্ভীর হয়ে আয়াজ জবাব দিলো,

‘আপনি আমায় কঠিন হতে বাধ্য করছেন। পরে এর জন্য আফসোস না করতে হয়!’

প্রিয়তা সোজা চোখে আয়াজের দিকে তাকালো। এই ছেলেটিকে সে চেনে। তাদের এলাকাতেই থাকে। শুধু সে নয় এলাকার সকলেই চেনে তাকে। এর বাপ চাচা সকলে বিশাল রাজনীতিবিদ। সে সুত্রেই এলাকায় অন্যরকম দাপট আছে তাদের। তাছাড়া দেখতে সুদর্শন হওয়ায় এলাকার মেয়েদের মুখে মুখে আয়াজের নাম শোনা যায়। প্রিয়তা ছেলেটাকে সবসময় গম্ভীর শান্ত থাকতে দেখেছে। কখনো কোনো মেয়ের দিকে মাথা উঁচু করে তাকায়নি এই ছেলে এমনটাই শোনা যায় লোকমুখে। কিন্তু এই ছেলে যে এতবড় কান্ড করেছে তা কি কেউ জানে? এর বাপ চাচাদের কেউ জানতে পারলে নিশ্চিত প্রিয়তাকে নিজের প্রাণ হারাতে হবে। প্রিয়তা জোরে নিঃশ্বাস ছাড়লো। নাহ এভাবে হবে না। তাকে একপা সমঝোতার মাঝে আসতে হবে। ছেলেটাকে বোঝাতে হবে শান্ত নরম কন্ঠে।

‘কাল বিকেল পাঁচটায় ক্যাফেটেরিয়ায় দেখা হবে। এখন প্লিজ কোনো রিয়্যাক্ট না করে চলে যাও। প্লিজ।’

প্রিয়তার কন্ঠে অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। আয়াজের প্রেমিক হৃদয় কোমল হলো। প্রেয়সীর কম্পনরত কন্ঠ তার প্রেমিক মনকে কিছুটা হলেও কাবু করেছে। তবে যাওয়ার পূর্বে শক্ত কন্ঠে প্রিয়তাকে শাসাতে ভুলল না। নিখিলকে ইশারা করে বলল,

‘আপনাকে আর কখনো এই ছেলের সাথে না দেখি প্রিয়। আমি আপনার প্রতি বারবার কোমল হব না মাথায় রাখবেন।’

কথা শেষ করে এক মুহুর্ত ও দাঁড়াল না আয়াজ। যেভাবে তুফানের মতো এসেছিল ঠিক সেভাবেই হারিয়ে গেল। প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে ক্লান্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ততক্ষণে নিখিল পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

‘দুঃখিত ম্যাডাম। একটা কল এসেছিল। পিক করতেই লেট হলো।’

নিখিল কাগজের প্যাকেটটা প্রিয়তার দিকে বাড়িয়ে দিল। হাসি মুখে বলল,

‘আপনি বললে আমি বাদাম ছুলে দিতে পারি। আপনার কষ্টটা কিঞ্চিত কমবে না হয়!’

‘ইটস ওকে। আমি ছুলে নিচ্ছি।’

‘চলুন ওদিকটায় হাঁটি।’

প্রিয়তা দেখলো প্রায় সন্ধ্যা হতে চলছে। বাড়ি ফেরার সময় হয়ে গেছে। তাই সে নিখিলকে বিনয়ের সাথে বিদায় জানালো নিজের ব্যস্ততা দেখিয়ে। একটা রিকশা ডেকে তাতে চড়ে বসতেই নিখিল হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো। স্বভাবসুলভ প্রিয়তা অল্প হাসলো। প্রিয়তা চলে যেতেই নিখিল তার হাতে থাকা শপিং ব্যাগটার দিকে তাকালো। শাড়িটা মুলত সে প্রিয়তার জন্যই কিনেছিল। শাড়িটা দিয়েই সে প্রিয়তাকে বিয়ের প্রোপোজাল দিতে চেয়েছিল। কিন্তু হায়! সে আজ ও সাহস করে উঠতে পারর না। এই মেয়েটার সামনে দাঁড়ালেই কেন যেন সে দিক বেদিক হয়ে যায়। নিখিলের নিজের অবস্থা দেখে হাসি পেল। তার বন্ধুমহলে এ কথা একবার ছড়িয়ে পড়লে তাকে বুলির শিকার হতে হবে। হাসিতে ফেটে পরবে বন্ধুমহল।

‘বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ। আমি তোমার বড় বোনের মতো। এক দুই নয় পাঁচ বছরের সিনিয়র আমি তোমার!’

‘এইজ ডাজেন্ট ম্যাটার।’

‘আর ইউ ম্যাড? বুঝতে পারছ না নাকি বুঝতে চাইছ না? ক্ষমতার জোরে যা চাও তাই হাসিল করতে চাও? কোনো পন্য আমি তোমার কাছে? যা পাওয়ার জন্য জেদ করছ?’

‘আপনাকে ভালোবাসি আমি।’

প্রিয়তা রাগে কাঁপতে লাগলো। এই মুহূর্তে ছেলেটাকে দুটো থাপ্পর দিয়ে বলতে ইচ্ছা হচ্ছে এসব বন্ধ করে পড়াশোনায় মন দে। আর নয়ত কয়েকটা জঘন্য গালি যা সে মামির কাছ থেকে শিখেছে। ভালোবাসার জন্য দেশে মেয়ের অভাব পড়েছে? আমিই কেন? প্রিয়তা সময় নিয়ে নিজেকে সামলাল। তীক্ষ্ণ চোখে আয়াজের দিকে তাকালো। আয়াজের মুখটা ভিষণ করুন দেখালো। চোখ দুটো ইতিমধ্যে লাল হয়ে গেছে। অন্যদিনের মতো আজ চোখে মুখে কঠোরতা নেই। আয়াজের কোমল মুখটা দেখে প্রিয়তার খারাপ লাগলো। ছেলেটা কি কষ্ট পাচ্ছে? কিন্তু তার যে করার কিছু নেই। সমাজ যে এ সম্পর্ক সহজ ভাবে নিবে না। আঙুল তুললে সেটা তার দিকেই আসবে। প্রিয়তা শান্ত কন্ঠে বলল,

‘আমি আপনার পরিবারের সাথে এ ব্যপারে কন্টাক্ট করতে চাই। আমি চাই তারা যেন আপনার এই পাগলামি বন্ধ করুক। আমি চাইনা এ সামান্য ব্যাপার আমাদের কারো উপর প্রভাব ফেলুক। আপনার পরিবারকে জানানো জরুরি। আমি সত্যিই পারছি না।’

‘আপনি‌ ভিষণ পাষাণ হৃদয়ের প্রিয়। একটু কি কোমল হওয়া যায় না?’

প্রিয়তা এ কথার কোনো উত্তর দিলো না। আর না দ্বিতীয় বার আয়াজের দিকে ফিরে তাকালো। ব্যস্ত পায়ে বের হয়ে গেল ক্যাফে থেকে। আয়াজ করুণ চোখে চেয়ে থাকল প্রিয়তার যাওয়ার পানে। মানবীটা সত্যিই কঠিন হৃদয়ের। এই কঠিণতায় তার প্রিয়কে একদম মানায় না। তার প্রিয়কেতো হতে হবে কোমল। কোমলতাই যে নারীর সৌন্দর্য।

আজ পড়াতে যায়নি প্রিয়তা। মামির কল পেয়ে সোজা বাসায় চলে এসেছে। শরীরের সাথে সাথে মন ও ভিষণ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে তার। পড়নের থ্রিপিস না পাল্টেই লম্বা হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। মিনিট পাঁচেক পর সুজলা এলো রুমে। আজ সুজলার চেহারায় হাসি ধরছে না বললেই চলে। লাল রঙের একটা শাড়ি হাতে দিয়ে হাসি মুখে সুজলা বলল,

‘প্রিয়তা তোকে শাড়িটায় খুব মানাবে। যা তো পড়ে আয়। আমি নিজ হাতে তোকে সাজিয়ে দেব।’

প্রিয়তা অবাক চোখে মামির দিকে তাকালো। এমন সুন্দর কথার মানুষ তার মামি কখনোই না। নিশ্চই এর পেছনে বড় কোনো রহস্য আছে।

‘আমার শরীর ভালো নেই মামি। এখন ইচ্ছা হচ্ছে না। অন্য কোন সময় নাহয় পড়বো।’

সুজলার হাসি হাসি মুখ কঠিন হলো। শক্ত কন্ঠে বলল,

‘এখনি রেডি হয়ে নে। আমার বোন আসছে তোকে দেখতে। ওর বড় ছেলের জন্য তোকে পছন্দ করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে সবাই।’

‘আপনি কি ঐ নেশাখোর ছেলেটার কথা বলছেন?’

‘নেশা করে এ আর এমন কি? এখনকার বড়লোকের ছেলেরা ওমন একটু আধটু নেশা করে। আর কোনো কথা শুনতে চাই না।’

প্রিয়তা আর সহ্য করতে পারলো না। চেঁচিয়ে উঠে বলল,

‘আপনাদের কাছে কি আমি মানুষ না? আমার কি মন নেই? এতটাই অযোগ্য আমি যে ওমন চালচুলো হীন একটা নেশাখোর ছেলেকে বিয়ে করতে হবে?’

সুজলা ক্ষিপ্ত হলো। ঠাস করে থাপ্পর লাগালো‌ প্রিয়তার গালে। মুহূর্তে সুন্দর গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ পড়ে গেল। সুজলা তখনও রাগে ফুঁসছে। তার ঘরে থেকে তার উপর গলা চড়ানো সে মোটেই সহ্য করবে না। প্রিয়তা লজ্জা ঘ্রিণায় ঢুকরে কেঁদে উঠলো। দূর থেকে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে তুলি সবটা দেখলো। প্রিয়তাকে কাঁদতে দেখে সেও চোখের জল নাকের জল এক করলো। বাবা এলে আজ সে এর একটা বিচার করবেই। এসব আর সহ্য করা যায় না। এছাড়া আরো একজন আছে যে পারবে তার আপুকে সাহায্য করতে। সে কিছুতেই তার আপুকে অপন জঘন্য লোকটার সাথে বিয়ে করতে দিবে না। কখনোই না।জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে প্রিয়তা। তার জীবনে কি হচ্ছে সে কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। কেমন অগোছালো নিয়মে এগিয়ে চলছে জীবন। এ জীবনের কোন মানে হয়? হতাশ চোখে বাইরে দৃষ্টি ফেলল সে। পাশের বাড়ির ছাদে ছোট বাচ্চারা খেলছে। তুলিও আছে সেখানে। লাল ফ্রকে তুলিকে সুন্দর লাগছে। চুলগুলো বেনুনি করা। ভিষণ মিষ্টি লাগছে দেখতে। নানু মারা যাওয়ার পর পৃথিবীতে এই একমাত্র মানুষ যে তার কথা ভাবে। তাকে আপন মনে করে। বুকের ভেতর একধরনের সূক্ষ ব্যথা অনুভব হল। এ পৃথিবীতে সত্যিই তার কেউ নেই!

খাবার প্লেট সামনে নিয়ে বসে আছে প্রিয়তা। তার মন এখন অন্য কোথাও বিরাজ করছে। কিছুক্ষণ পূর্বে মামি এসে জানিয়েছে তাকে বিয়ে করতে হবে না। এটা শুনে প্রিযতা খুশি হলেও চিন্তার কারণ মামির বলা দ্বিতীয় কথাটা। কেউ একজন মামিকে শাসিয়েছে প্রিয়তার বিয়ে না দিতে এমনটাই বলেছে মামি। এখন কথা হচ্ছে এই কেউ একজন টা কে? আবার কোন বিপদের সম্মুখীন হতে হবে তাকে? সে যতই বিপদ থেকে দূরে যেতে চায় না কেন বিপদ যেন তাকে ছাড়তেই চায় না। সব সময় আগে পেছনে লেগেই আছে।

লাল পাড় বিশিষ্ট সাদা রঙের শাড়িতে প্রিয়তাকে অপ্সরির মতো লাগছে। চুলগুলো খোপা করে ক্লিপ এটে নিলো। কিছু একটা মনে করে চোখে অল্প কাজল ও লাগালো। তেমন একটা সাজগোজ করা হয়না তার। জীবনেই যেখানে কোনো রঙ নেই সেখানি শরীরে রঙ মেখে ঘোরার কোনো প্রশ্নই আসে না। আয়নায় আরো একবার নিজেকে দেখে নিয়ে ব্যাগ হাতে রুম থেকে বের হলো। বের হতেই মামার সাথে দেখা হলো। প্রিয়তার মামা জাহিদ বেশিরভাগ সময়ই শহরের বাইরে থাকেন। আজ ভোরেই ফিরেছেন তিনি। প্রিয়তাকে দেখে মুচকি হেসে বলল,

‘কেমন আছিস মা? চাকরি কেমন চলছে?’

বিনিময়ে প্রিয়তা শুকনো হাসলো। ছোট করে জবাব দিলো,

‘হুম ভালো।’

জাহিদ বলার মতো আর কিছু খুঁজে পেল না। সে জানে মেয়েটার সাথে কতটা অন্যায় অত্যাচার হয় এ পরিবারে। কিন্তু সে নিরুপায়। মেয়েটাকে কেবল আশ্রয় দেওয়া ছাড়া আর কোনো ভাবে সে সাহায্য করতে পারলো না। সে প্রতিবাদ করলে হয়তো মেয়েটার বেঁচে থাকাই দায় হয়ে দাঁড়াত। তার থেকে যেভাবে চলছে চলুক। প্রাণটা বেঁচে থাকুক। জাহেদ অপলক চোখে প্রিয়তার দিকে তাকালো। মেয়েটা ঠিক ওর মায়ের রূপ পেয়েছে। এত সুন্দর ফুলের মতো মেয়েটাকে টোকা দিতেও কলিজা কাঁপে সেখানে সুজলা কিভাবে পারে এত অত্যাচার করতে? ওর কি হৃদয় নেই? জাহিদের গলা ধরে আসে। চোখ জ্বালা করছে। নিজের ব্যর্থতা গুলো পানি হয়ে ঝরতে চাইছে।

‘মা টাকা পয়সা কিছু লাগলে বলিস।’

‘হুম বলবো।’

প্রিয়তা বের হয়ে গেলো। পেছন থেকে জাহিদ ডাকল।

‘নাস্তাটা করে যা।’

প্রিয়তা শুনতে পেয়েও জবাব দিলো না। আর কিছুক্ষণ সে মামার সামনে থাকলে কেঁদে ফেলবে। কিন্তু সে তার দুঃখ কাউকে দেখাতে চায় না। তার দুঃখগুলো নাহয় একান্তই তার হয়েই থাক।

গলি থেকে বের হয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো প্রিয়তা। আজ যেন কোনো রিকশা এদিকটায় না আসার পণ করেছে। বিরক্তিতে মুখ থেকে ‘চ’ বেরিয়ে এলো। হাত ঘড়িতে সময় দেখে কপালের মাঝে সূক্ষ ভাঁজ ফেলল।

‘আজ লেট কেন করলেন প্রিয়? অপেক্ষা করছিলাম।’

প্রিয়তা ক্রুদ্ধ চোখে তাকালো আয়াজের পানে। চোখের দৃষ্টিতে বোঝালো আর একটাও কথা বললে চিবিয়ে খাবো। কিন্তু এতে আয়াজের ভাবের পরিবর্তন হলো না। দুহাত চুলে চালান করে অগোছালো চুলগুলো গুছিয়ে আর একটু কাছ ঘেঁষে দাঁড়ালো প্রিয়তার।

‘আপনাকে ভিষণ সুন্দর লাগছে। বিয়ের পর এভাবেই সবসময় শাড়ি পড়বেন।’

আর সহ্য হলো না প্রিয়তার। আয়াজের দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,

‘তুমি অতিরিক্ত মাত্রায় অসভ্য। একজন সিনিয়রকে কিভাবে সম্মান দিতে হয় তার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই তোমার।’

জবাবে মুচকি হাসলো আয়াজ। প্রিয়তা ফুঁসে উঠলো। ভাবনার চাইতেও অনেক বেশি অভদ্র ছেলেটা।

রিকশা পাওয়ার সাথে সাথে উঠে পড়লো প্রিয়তা। রোজকার মতো চোখের আড়াল না হওয়া অবদি অপেক্ষা করলো আয়াজ। সে শুধু তার এই অপেক্ষার সুমিষ্ট ফল উপভোগ করার অপেক্ষায় আছে। তার এই অপেক্ষার অবসান হয়তো খুব শীঘ্রই ঘটতে চলেছে। প্রিয়তা চোখের আড়াল হতেই বাড়ির পথে পা বাড়ালো সে। আজ তাকে বাবার সাথে অফিসে যেতে হবে। তার গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করতে এখনো দু বছর বাকি। কিন্তু সে চায় গ্রাজুয়েশন শেষ হওয়ার আগেই অফিসিয়াল সব কাজে পারদর্শী হতে। তাকে নিজেকে প্রিয়তার যোগ্য করে তুলতে হবে। প্রিয়তা পর্যন্ত পৌছাতে তাকে যা যা করতে হবে সে তার সবটা করতে রাজি।

প্রিয়তার প্রতি তার এই অনুভূতি আজকের নয়। এর শুরু আরো চার বছর পূর্বে। আয়াজ তখন সবে ক্লাস নাইনে। সে চট্টগ্রামে নানা বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করত। তার বাবার রাজনীতি জনিত কিছু কারণে তাকে সবকিছু থেকে দূরে রাখা হয়েছিলো। সেবছর আয়াজ প্রথম ঢাকার মাটিতে পা রাখে। শুরু হয় নতুনভাবে জীবন জাপন। নতুন স্কুল, নতুন পরিবেশ, নতুন বন্ধু সবকিছুর সাথে খাপ খাইয়ে নিতে তার বেশ কষ্ট হয়েছিলো। একদিন বিকেলে কাছের পার্কে ঘুরতে গেলে সে দেখতে পায় কোনার এক বেঞ্চিতে একটা মেয়ে বসে কেঁদে কেঁদে কাউকে অভিযোগ করছে। এতবড় মেয়ের এমন বাচ্চা স্বভাব দেখে আয়াজ সেদিন ভিষণ হেসেছিল। এরপর থেকে আয়াজ প্রায়ই মেয়েটাকে দেখতো। মেয়েটার বড় বড় চোখ করে তাকানো। গাল ফুলিয়ে একা পার্কে বসে থাকা সব তার ভিষণ ভালো লাগতো। আয়াজ যখন বুঝতে পারে সে এই মেয়েটার সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে তখন সে গোপনে প্রিয়তার সকল খোঁজ নেয়। প্রিয়তা তার থেকে পাঁচ বছরের বড় জানতে পেরে সে নিজেও শক হয়েছিলো। প্রিয়তাকে দেখে তার কখনো মনে হয়নি মেয়েটা তার থেকে এত বড় হতে পারে। আয়াজ নিজেকে বন্দি বানিয়ে ফেলল। পড়াশোনা ছাড়া আর কোনো কিছুই যেন ছিলনা তার জীবনে। নিজেকে অনেকটা সামলে নেয় সে এক বছরে। কিন্তু সমস্যা হয় তার কিছুদিন পর। সেদিন ছিলো পহেলা বৈশাখ। আজকের মতো করেই সেদিন প্রিয়তা লাল সাদা শাড়িতে নিজেকে সাজিয়েছিল। আয়াজ তার পরিচিত কিছু ফ্রেন্ডের সাথে রমনায় গিয়েছিলো ঘুরতে। নিজেদের মধ্যে কিছু একটা আলোচনা চলছিলো ঠিক তখন তার পেছনে রিনরিনে কন্ঠে কেউ বলে উঠলো,

‘মামা চার প্লেট ফুচকা। ঝাল একটু বেশি হবে।’

কন্ঠস্বর অনুসরণ করে তাকাতেই তার হার্ট বিট মিস করেছিল যেন। সর্গ থেকে যেন কোনো এন্জেল নেমে এসেছে। মন্ত্রে বশিভুত হওয়ার মত করেই সে নিশ্পলক তাকিয়ে ছিল প্রিয়তার পানে। সেদিনের পর থেকে আয়াজের এক রোগ হলো। রোগের নাম প্রিয়তা। লক্ষণ গুলো এমন ছিল, রোজ নিয়ম করে যেমন মানুষ খাবার খায় ঠিক সেভাবেই নিয়ম করে তাকে প্রিয়তার মুখ দর্শন করতে হতো। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তার ভিষণ প্রিয়তাকে দেখতে ইচ্ছা করত। এই ইচ্ছাবোধের ফল তার বাকি রাতটুকু নির্ঘুম কাটাতে হতো। তার ভিষণ জ্বর হলে ঘোরের মাঝে সে বারবার প্রিয়তার নাম নিত। অস্পষ্ট স্বরে বলা তার এ নাম কেউ বুঝতে না পারলেও সবাই এটুকু বুঝত ছেলে কারো নাম বলছে। এ নিয়ে তার মায়ের চিন্তার অন্ত ছিলো না। এভাবেই সময় যেতে যেতে পরিস্থিতি আজ এ পর্যায়ে।

‘তুমি কি কখনোই পাংচুয়াল হবে না?’

বাবার গম্ভীর কথায় আয়াজ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। তরিকুল সাহেব গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে রইল ছেলের দিকে। অফিসের প্রথম দিন এক ঘন্টা লেইট! তার গোছাল ছেলেটা দিন দিন অগোছালো আনপাংচুয়াল হয়ে পড়ছে। সে বাবা হয়ে ছেলের এই অধঃপতন কিভাবে সহ্য করবে? করা কি উচিত? আকাশ অন্ধকার হয়ে আছে। যখনতখন ঝুপ করে বৃষ্টি নেমে যাবে। বর্ষা কালের এই এক সমস্যা। সময় অসময় বৃষ্টি নামবে। এই দেখা যাবে আকাশের বুক উজ্জল করে সূর্য উঠেছে আবার মুহূর্তেই নিজের রূপ বদলে ছেয়ে পড়বে আঁধারে। কুঁচকানো কপাল আরো কিছুটা কুঁচকে এলো আয়াজের। প্রকৃতির উপর ভিষণ রকম বিরক্ত সে। বড় দেয়াল ঘড়িতে নজর দিতেই বুঝলো প্রিয়তার বাসায় যাওয়ার সময় হয়েছে। এতক্ষণে তার মুখে মুচকি হাসির সরল রেখা দেখা গেল। নিজের ডেস্ক থেকে বেরিয়ে যেতেই তার সহকর্মী মেয়েরা তাকে চোখ দিয়ে গিলে খেতে লাগলো যেন। কেউ কেউবা ফিসফিস করে কিছু বলছে। কিন্তু সে এতে পাত্তা দিল না। এ ধরনের ছেঁচড়া টাইপের মেয়ে তার একদম পছন্দ না। বিরবির করে বলল,’ শ্যামলেস!’

আজ ভিষণ মন খারাপ প্রিয়তার। মন খারাপের দিনগুলোতে তার মায়ের কথা ভিষণ মনে পড়ে। আজ ও মনে পড়ছে। মায়ের চেহারাটাও তার স্পষ্ট মনে পড়ে না। কেমন ঘোলাটে স্মৃতি। প্রিয়তার চোখ ভিজে ভিজে উঠছে। আজ বাস আসতে লেইট করছে। আকাশের অবস্থা ভালো না। দোকানপাটের অধিকাংশ শাটার টেনে দেওয়া হয়েছে। প্রিয়তা ঠিক করেছে সে আর লাল সাদা রঙের শাড়ি পড়বে না। এই শাড়ি পড়লে সেদিন ভিষণ রকম বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি আর তার শাড়ির অদ্ভুত কোন এক কানেকশন আছে। ঝুপ করে বৃষ্টি নেমেছে। এখন বিকেল হলেও দেখে মনে হচ্ছে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে প্রিয়তা যাত্রী ছাউনীর নিচে পদাড়ালো। এই লাইনের বাসটার কোনো ঠিক নেই। আজ না আসলেও পারে। বিরক্ত চোখে আসপাশে তাকালো প্রিয়তা। ফাঁকা কোনো ট্যাক্সি পেলেও চলে। ভাড়াটা যদিও একটু বেশি চাইবে। বাট ইটস্ ওকে।

‘বৃষ্টির তেজ বাড়ছে। এখন কোনো ট্যাক্সি পাওয়া যাবে না।’

বৃষ্টির জলে কাকভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আয়াজ। চুল থেকে টুপটাপ করে পানি পড়ছে। সাদা রঙের শার্টটা ভিজে গায়ের সাথে লেগে আছে। প্রিয়তা আয়াজের দিকে কিছুটা এগিয়ে গেল। শান্ত গলায় শুধাল,

‘এখানে কি করছ তুমি? আর এতটা ভিজলে কিভাবে?’

জবাবে গা দুলিয়ে হাসলো আয়াজ। ভেজা চুলগুলো ঝাঁকিয়ে পানি ছিটালো প্রিয়তার দিকে। ছিটা ছিটা পানি এসে পড়লো প্রিয়তার মুখমন্ডলে। গরম চোখে আয়াজের দিকে তাকাতে সে আবারো হাসলো। প্রিয়তা বিরক্ত হয়ে চোখ সরিয়ে নিল।

‘আপনার কি আমাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে প্রিয়?’

‘একদম না। তুমি মরে গেলেও তোমাকে নিয়ে চিন্তখ করার মতো তুচ্ছ কাজ আমি করবো না।’

প্রিয়তা ভেবেছিলো তার এমধ কঠিন বাক্য আয়াজকে আহত করবে। আত্মসম্মানে আঘাত করবে কথাটা। আয়াজ তখন প্রতিউত্তরে বলবে,

‘আপনি ভিষণ জাদরেল টাইপ মেয়ে। এমন মেয়েকে আমি কখনোই আমার মূল্যবান প্রেম সমার্পন করবো না। যতটা করেছি তা সহিসালামতে আমার কাছে ফিরিয়ে দিবেন। আল্লাহ হাফেজ।’

প্রিয়তা তখন ভিষণ দুঃখ পাওয়ার অভিনয় করে বলবে,

‘কেবল এতটুকুতেই তোমখর প্রেম ফুরিয়ে এলো?’

কিন্তু আয়াজ কোনো উত্তর দিবে না। তার গম্ভীর্যতা বজায় রেখে বলবে,

‘আমায় ট্রিক করার চেষ্টা করবেন না। আপনার ভোলাভালা মুখ দেখে আমি আর ফাঁসছি না।’

প্রিয়তার এতসব জল্পনা কল্পনাকে জলে ফেলে দিয়ে আয়াজ সুন্দর হেসে বলল,

‘আমি জানি। আর এজন্যই আমি মরতে চাই না। আমার তো এখনো আপনাকে ভালোবাসা বাকি। সংসার করা বাকি। বচ্চার মুখে বাবা ডাক শোনা বাকি। এত অপূর্ণতা নিয়ে মারতে পারি বলেন?’

প্রিয়তা জবাব দিলো না। তার এই ছাব্বিশ বছরের জীবনে সে অনেক প্রেমের প্রোপোজাল পেয়েছে। কিন্তু তার কেউই এক সপ্তাহের বেশি প্রিয়তার পেছনে ছুটতে পারেনি। এর অন্যতম কারণ প্রিয়তার কঠিণতা। কিন্তু এই ছেলে তেমন নয়। তার কঠিণতা আয়াজকে তার স্থান থেকে এক চুল পরিমান নড়াতে পারেনি। প্রিয়তা হতাশ চোখে বাইরে তাকায়। বৃষ্টি এখনো তেজ নিয়ে ঝড়ছে। এর শেষ কখন বলা যাচ্ছে‌ না।

‘এদিকে সরে দাঁড়ান প্রিয়তা। ভিঁজে যাচ্ছেন।’

ছিটা ছিটা পানিতে প্রিয়তার শাড়ি অনেকটা ভিঁজে গিয়েছে যা লক্ষ করেনি প্রিয়তা। আয়াজের গম্ভীর স্বরে উচ্চারণ করা তার নাম শুনে সে কেঁপে উঠলো কিছুটা। দিরুক্তি না করে বাধ্য মেয়ের মতো কিছুটা আয়াজের দিকে সরে দাঁড়ালো। এটাই হয়তো প্রথম আয়াজ তার পূর্ণ নাম ধরে ডেকেছে।

‘রাত হয়েছে প্রিয়। চলুন আপনাকে পৌঁছে দিচ্ছি।’

প্রিয়তা কোনো কথা বলল না। জেদ নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল একই জায়গায়। আয়াজ প্রিয়তার এই অবাধ্যতা দেখে চোয়াল শক্ত করে নিলো। কঠিন গলখয় বলল,

‘আপনার এ ধরণের অবাধ্যতা আমি সহ্য করবো ভাবলে ভুল ভাবছেন।’

প্রিয়তা কোনো রিয়্যাকশন ছাড়া ঠায় দাঁড়িয়ে রইল। মিনিট দশেক একইভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পর অবশেষে একটা ট্যাক্সি পেতে চড়া ভাড়ায় তাতেই চেপে বসলো প্রিয়তা। আয়াজ শুকনো গম্ভীর মুখ করে কেবল তাকিয়ে রইল। মেয়েটার অবাধ্যতা সীমা লঙ্ঘন করছে। অতি শীঘ্রই এর একটা ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।

দরজায় কড়া নাড়তে সুজলা এসে দরজা খুলল। মামিকে দরজা খুলতে দেখেই প্রিয়তা বুঝতে পেরেছে আজ বড় কিছু ঘটতে চলছে। কিন্তু তার ভয় লাগলো না। এসবে সে ঐখন অভ্যস্ত।

‘এত রাত পর্যন্ত কোথায় ছিলি?’

‘বৃষ্টিতে আটকা পড়েছিলাম।’

Exit mobile version